Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, August 30, 2013

সংসদে অভব্যতার অভিযোগ কল্যাণের বিরুদ্ধে

সংসদে অভব্যতার অভিযোগ কল্যাণের বিরুদ্ধে

সংসদে অভব্যতার অভিযোগ কল্যাণের বিরুদ্ধে
নয়াদিল্লি: তাঁর বয়স ৭১৷ ৩৩ বছর ধরে সাংসদ৷ বৃহস্পতিবার লোকসভায় সেই প্রবীণ সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়াকে সরাসরি তুই-তোকারি করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সঙ্গে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি৷ বাসুদেববাবু আসন ছেড়ে দাঁড়াতেই কল্যাণবাবু তাঁর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন, 'বসে পড় বাসু, বসে পড়৷ বুদ্ধ কোথায় রে বাসু? বুদ্ধ এখন ধুতি ছেড়ে পাজামা পরছে রে? জেলা পরিষদে তোদের শুইয়ে দিয়েছি৷' জয়রাম রমেশ, লালুপ্রসাদ যাদব ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে শান্ত করতে পারছিলেন না৷ একসময় সিপিএম ও তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়৷ তখন সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গোয়ার সাংসদ ফ্রান্সিসকো সারদিনহা৷ তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, 'ভুলে যাবেন না, এটা লোকসভা৷ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নয়৷' সংসদে খেউড় নতুন কিছু নয়, কিন্ত্ত এ দিন কল্যাণ যে ভাবে লাগামছাড়া কথার তুবড়ি ছুটিয়েছেন তাতে বাকি সাংসদরা একইসঙ্গে বিরক্ত এবং স্তম্ভিত৷ 

জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যয় বলতে শুরু করার পরেই ঘটনার সূত্রপাত৷ সুদীপবাবু তাঁর বক্তব্য শুরু করেন নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের কৃষকদের সেলাম জানিয়ে৷ তিনি বলেন, '১৮৯৪ সালের দানবীয় আইন নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষকরা যে লড়াই করেছেন, তা এখন ইতিহাস৷ কৃষকদের উপরে গুলি চলেছে, অত্যাচার হয়েছে, প্রচুর কৃষক মারা গিয়েছেন৷' এটুকু বলার পরই সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোম উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন৷ সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদরা৷ চিত্‍কার শুরু হয়ে যায়৷ সিপিএম ও তৃণমূল সাংসদরা তখন সমানতালে চেঁচাচ্ছেন৷ সবার উপরে ছিল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা৷ তিনি বলতে থাকেন, 'আমরা এ সব অ্যালাও করব না৷' জয়রাম দ্রুত যান তাঁদের শান্ত করতে৷ এর মধ্যে কাকলি ঘোষদস্তিদারকে বলতে শোনা যায়, 'মার্ডারারস৷'

সভা শান্ত হলে সুদীপ বলেন, 'ঈশ্বর ওদের ক্ষমা করুন৷' আবার সিপিএমের হইচই শুরু হয়৷ এ বার বাসুদেব আচারিয়া নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়ান৷ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বলেন, 'বোস, বাসু, বোস৷' তিনি এত জোরে কথা বলছিলেন যে হট্টগোলের মধ্যেও তাঁর কথা বোঝা যাচ্ছিল৷ আবার জয়রাম রমেশ তাঁর কাছে গিয়ে শান্ত হতে বলেন৷ সারদিনহা সমানে বলতে থাকেন, 'শান্ত হোন৷ আপনারা শান্ত হোন৷' সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত তৃণমূল সাংসদদের বলেন, 'বসুন, বলতে দিন৷' সুদীপবাবু তার পর বলেন, 'ওদের কষ্টটা হল, কেউই এ বার আর জিতে আসতে পারবেন না৷' ঠিক পিছন থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের নেতাকে বলেন, এ বার বাঁশি বাজাতে হবে৷ এর পর সুদীপের বাকি ভাষণের সময় আর কোনও গণ্ডগোল হয়নি৷

কিন্ত্ত গণ্ডগোল আবার শুরু হয় বাসুদেব আচারিয়া বলতে ওঠার সময়৷ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জনা পাঁচেক তৃণমূল সাংসদ উঠে দাঁড়িয়ে হইহল্লা শুরু করে দেন৷ কল্যাণবাবু এ বার হিন্দিতে বলেন, 'বুদ্ধ কাঁহা হ্যায়?' এতক্ষণ বাংলায় কথা চলছিল বলে সম্ভবত কেরলের সিপিএম সাংসদরা ভাল করে বুঝতে পারেননি৷ হিন্দিতে এই কথা শোনার পর তাঁরা হইহই করে জায়গা ছেড়ে নেমে আসেন৷ তৃণমূল সাংসদরাও নেমে পড়েন৷ মাঝখানে একসারি আসন৷ একদিকে সিপিএম ও বাম সাংসদরা ও অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদরা উত্তেজিত হয়ে চিত্‍কার করছেন৷ একে অন্যের দিকে আঙুল তুলে শাসানির ভঙ্গিতে কথা বলছেন৷ প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম৷ মন্ত্রী নারায়ণস্বামী গিয়ে সিপিএম সাংসদদের সামলাচ্ছেন৷ জয়রাম, লালুপ্রসাদ, জগদম্বিকা পাল তৃণমূল সাংসদদের শান্ত করার কাজে ব্যস্ত৷ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে টানছেন৷ সারদিনহা তখন বললেন, 'দয়া করে, সভার মর্যাদা রক্ষা করুন৷' অবস্থা একটু শান্ত হওয়ার পর সিপিআই সাংসদ প্রবোধ পান্ডার সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তর্কাতর্কি শুরু হয়৷ আবার প্রচণ্ড চিত্‍কার৷ তার মধ্যে সারদিনহা বললেন, 'অত্যন্ত খারাপ৷ আপনারা যদি নিজেদের বিরোধ মেটাতে চান তো অন্য জায়গায় গিয়ে মেটান৷'

পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে বাসুদেব আচারিয়া বলেন, 'কখনও ভাবিনি এমন পরিস্থিতি আসবে৷' তার পর তিনি বলতে শুরু করেন৷ ভাষণের মধ্যে এক জায়গায় সৌগত রায় বলেন, নন্দীগ্রামে কী হয়েছিল? বাসুদেবের জবাব, নন্দীগ্রামে এক ইঞ্চি জমিও নেওয়া হয়নি৷ সৌগত রায় বলেন, ঘোষণাতেই তো গন্ডগোল হয়েছিল৷ বাসুদেব আচারিয়ার জবাব, 'ঘোষণা করা আর অধিগ্রহণের মধ্যে অনেক ফারাক আছে৷' এর পর আবার হট্টগোল৷ পরে বাসুদেববাবু বলেন, 'কী করব! ওদের প্রশিক্ষণ দরকার৷ ওরিয়েন্টেশন কোর্স করা দরকার৷' গণ্ডগোল যখন হচ্ছে, তখন সারদিনহা বারবার করে বলতে থাকেন, 'এ সব কিছুই নথিভুক্ত হবে না৷ এটা অত্যন্ত খারাপ রুচির পরিচয়৷ আপনারা এই সভাকে উপহাস করছেন৷'

কিছুদিন আগেও যশবন্ত সিংয়ের দিকে আঙুল তুলে চিত্‍কার করতে করতে ছুটে গিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার পর তাঁকে দুঃখপ্রকাশও করতে হয়েছিল৷ তখন বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, প্রথমবারের সাংসদ দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলে বিজেপি বিষয়টাকে 'ক্লোজড চ্যাপ্টার' বলে মনে করছে৷ তার কিছুদিনের মধ্যেই ফের একই ঘটনা৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...