Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Wednesday, August 28, 2013

সেনা অভিযানের শঙ্কায় ৬৬ টাকা পার হল ডলার

সেনা অভিযানের শঙ্কায় ৬৬ টাকা পার হল ডলার

সেনা অভিযানের শঙ্কায় ৬৬ টাকা পার হল ডলার
এই সময়: ডলার-টাকার বিনিময় দর শুধু পড়ছেই না, লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ছে৷ সপ্তাহের প্রথম দিনই টাকার দর গত শুক্রবারের তুলনায় ১.৭২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ডলার প্রতি ৬৪.৩০ টাকা৷ মঙ্গলবার সেই দর আরও প্রায় তিন শতাংশ কমে দাঁড়ায় ডলার প্রতি ৬৬.২১ টাকা! বস্ত্তত, মঙ্গলবার টাকার দাম যতটা পড়ল একদিনে এতটা পতন গত আঠারো বছরে দেখা যায়নি৷ 

গত দু'দিনে কী এমন ঘটল যে ডলারের তুলনায় টাকার দাম প্রায় পাঁচ শতাংশ পড়ে গেল? সত্যি কথা বলতে কি, টাকার দাম পড়েনি৷ ডলারের দাম বেড়েছে৷ আর, সেটা বেড়েছে পৃথিবীর সব দেশের মুদ্রার সাপেক্ষে৷ পার্থক্য শুধু এই যে বাকিদের তুলনায় ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রা পড়েছে একটু বেশি হারে৷ 

এই 'একটু বেশি'র একটা ভারতীয় কারণ অবশ্যই আছে৷ সোমবার লোকসভায় খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ হয়েছে৷ খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে ২,০০০ কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় দরে ১,৩২,৪২০ কোটি টাকা) ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে৷ এত টাকা আসবে কোথা থেকে? রাজস্ব আদায় যেভাবে বাড়ছে তাতে এই আইন কার্যকর হলে সরকারের আর্থিক ঘাটতি বাড়বেই৷ 
সরকারি খরচ কমিয়ে আর্থিক ঘাটতি জাতীয় উত্‍পাদনের ৪.৮ শতাংশে বেঁধে রাখার যত প্রতিশ্রুতি অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এতদিন দিয়ে এসেছেন তার উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না বিদেশি বিনিয়োগকারীরা৷ সামনের বছরে ভোট৷ সেই দিকেই চোখ রেখেই যদি খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে এত ইউপিএ সরকারের এত তাড়াহুড়ো, তবে নির্বাচনী বছরে জনমুখী খরচের বহর কমানো হবে কী করে? 

দেশের আর্থিক ঘাটতি ৪.৮ শতাংশে সীমিত রাখতে সরকার সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিলেও, সোমবার ও মঙ্গলবার টাকার বিনিময় দরে পতন আসল কারণ ছিল সিরিয়া৷ ২১ অগস্ট দামাস্কাসের উপকন্ঠে ৮০ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার রাষ্ট্রপতিক বাশার আল-আসাদকেই দায়ী করে সোমবার একটি 'নোটিস' পাঠায়৷ সিরিয়ার ওই মৃত নাগরিকদের বিরুদ্ধে আসাদের দল 'বিষাক্ত গ্যাস' ব্যবহার করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে জাতিপুঞ্জের একটি পর্যবেক্ষক দল গেছে৷ কিন্ত্ত, সেই পর্যবেক্ষক দল কোনও রির্পোট পাঠানোর আগেই মঙ্গলবার বিভিন্ন ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিতে শুরু করে যে আল-আসাদকে কে গদিচ্যুত করতে সামরিক অভিযান করা হতে পারে৷ এবং, এই সামরিক অভিযান খুব শীঘ্রই করা হতে পারে বলে সোমবার ইস্তানবুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের সহকারী বেশ কয়েকটি পশ্চিমী দেশের রাষ্ট্রদূতদের এক বৈঠকে হয়েছে, সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একথা জানিয়েছে৷ 

পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কয়েকদিন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে৷ যুদ্ধের আশঙ্কা করেই এবার বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারত-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ঋণপত্র, জাপানি ইয়েন এবং সুইস ফ্রাঙ্ক কিনতে শুরু করেছে৷ 

সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাস্তবিক শুরু হোক বা না হোক, মার্কিন প্রশাসনের এই ধরনের মন্তব্য যে বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থা কতটা অশান্ত করে তুলতে পারে তার পরিচয় একাধিকবার পাওয়া গেছে৷ সাম্প্রতিক কালে, ২২ মে এবং ১৯ জুন যখন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান বেন বার্নানকি ইঙ্গিত দেন মাসিক ৮,৫০০ কোটি ডলার মূল্যের ঋণপত্র কেনার প্রকল্প গুটিয়ে আনা হতে পারে৷ তারপরই গোটা বিশ্বজুড়ে ডলারের চাহিদা হঠাত্‍ই বেড়ে যায়৷ 

কিন্ত্ত, ঠিক কবে থেকে এই প্রকল্প গুটিয়ে আনা হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বার্নানকি৷ বলবেনই বা কী করে? ভাবা হয়েছিল, সেপ্টেম্বর থেকেই এই প্রকল্প গোটাতে শুরু করবে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ৷ কিন্ত্ত, গত শুক্রবার ও সোমবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেল সে দেশে নতুন বাড়ি বিক্রির সংখ্যা, দীর্ঘস্থায়ী ভোগ্যপণ্য বিক্রির সংখ্যা কমছে৷ অথচ, মার্কিন মুলুকে খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি এখন ১.৩ শতাংশ৷ গত বছর শুরুতেও এই হার ছিল ২.৫ শতাংশের বেশি৷ এর অর্থ, সে দেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও, ভোগব্যয় বাড়ছে না, কারণ লোকের ক্রয়ক্ষমতা বিশেষ বাড়ছে না৷ এই অবস্থায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার অন্যতম উপায় ডলারের দাম বাড়িয়ে দেশে আমদানি মহার্ঘ করা যাতে লোকে কম বিদেশি জিনিস কেনে এবং দেশিয় সংস্থাগুলির উত্‍পাদন বাড়ে৷ তাই, ২২মে এবং ১৯ জুনের বার্নানকির ওই ঘোষণা৷ এবং তাতে কাজও হয়েছে খানিকটা৷ জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্টের আমদানি কমেছে ৫৭০ কোটি ডলার! 

অর্থনীতিকে সংকট থেকে বের করে আনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরেক পন্থা হল যুদ্ধ৷ ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা দেয় 'সেভিংস অ্যান্ড লোন' সংকট৷ ১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর আজও 'ব্ল্যাক মানডে' বলে কুখ্যাত৷ ওই দিন মার্কিন শেয়ার বাজার ২৬ শতাংশের বেশি পড়ে যায় এবং গোটা বিশ্বে তার কম্পন অনুভুত হয়৷ এর ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থা যে বুদবুদ তৈরি হচ্ছিল তার বিস্ফোরণ হয় ১৯৯০-৯১ সালে৷ ১৯৯১ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে আমেরিকা৷ ইতিহাসে এই যুদ্ধ 'গাল্ফ ওয়ার' বলে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে৷ 

২০০০ সালের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলি ফের অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে-ডট কম বুদবুদ ফেটে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্টের অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় ২০০২ সালে৷ ২০০৩ সালে ফের ইরাক আক্রমণ করে জর্জ বুশ সরকার৷ তখনও বলা হয়েছিল 'উইপেন অফ মাস ডেস্ট্রাকশন' (ডব্লুএমডি) রয়েছে ইরাকের কাছে৷ সাদ্দাম হুসেন মারা গেছে৷ খোঁজ মেলেনি ডব্লিউএমডি-র৷ কিন্ত্ত, ২০০৪ সাল থেকেই মন্দা কাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরেছে মার্কিন অর্থনীতি৷ 

এর পর ২০০৮ সাল৷ আবার মন্দার কবলে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, আফগানিস্তানে তালিবান দমন, ২০১১ সালে লিবিয়ায় মার্কিনি সামরিক অভিযান শুরু করার আগেই মুয়াম্মার গদ্দাফির পতন৷ লাভ হয়নি মার্কিন মুলুকের৷ অবশেষে, সিরিয়া? 

সামরিক অভিযানের আশঙ্কা করেই মঙ্গলবার বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় তিন শতাংশ বেড়ে যায়৷ ভারতের জন্য এটা গোদের উপর বিষ ফোঁড়া৷ একেই ডলারের দর পৌঁছেছে ৬৬ টাকায়, তার উপর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ডিজেল, কেরোসিন, এলপিজিতে ভর্তুকির বহর৷ কী করে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম আর্থিক ঘাটতি ৪.৮ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি করছেন? সন্দেহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের৷ মুখের কথায় আর চিঁড়ে ভিজবে না৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...