Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, November 21, 2014

Nasreen Taslima:দিন দিন মানুষের ধন দৌলত বাড়ছে, জৌলুস বাড়ছে, ভোগ বিলাস বাড়ছে, সাজগোজ বাড়ছে। আগে আমাদের অল্পতে সুখ হতো, এখন অল্পতে সুখ হয় না। আগে দরিদ্র ছিলাম আরো এবং এখনকার চেয়ে সুখী ছিলাম আরও।


শীতের সকালে উঠোনে দাঁড়িয়ে রোদ তাপাতাম। বড় থালায় গরম ভাপা পিঠে নিয়ে কুয়াশার ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বস্তির কিশোরীরা আসতো। পিঠেগুলো পাতলা কাপড়ে ঢাকা থাকতো। কী যে অসম্ভব স্বাদ ছিল ওই সব পিঠের! ভাপা পিঠে বড় হয়ে খেয়েছি। কিন্তু অমন স্বাদ আর পাইনি।

নানিবাড়ির বরই ছিল শহরের সবচেয়ে সুস্বাদু বরই। বড় হয়ে বরই অনেক খেয়েছি। নানিবাড়ির বরইয়ের চেয়ে বেশি সুস্বাদু বরই আমি আর খাইনি। শুধু কি নানিবাড়ির বরই, আমাদের বাড়ির সেই পেয়ারা, সেই কাঁঠাল‍! কখনও কি অত ভালো পেয়ারা বা কাঁঠাল আর কোথাও খেয়েছি? খাইনি। একটুও বানিয়ে বলছি না।

মা রান্না করতো মাটির চুলোয়। ফুঁকনি ফুঁকে ফুঁকে কী যে অসম্ভব কষ্ট করে আগুন জ্বালাতে হতো মা'কে। সবসময় কাঠ থাকতো না, গাছগাছালির ডাল পাতা দিয়েই রান্না করতো মা। কিন্তু মা যা কিছুই রান্না করতো, সবকিছুর স্বাদ ছিল অবিশ্বাস্যরকম ভালো। বড় হয়ে সারা পৃথিবীর কত বড় বড় দেশের কত বড় বড় রেস্তোরাঁয় খেয়েছি। কত বড় বড় ব্যাংকোয়টে। মা'র হাতের ওই রান্নার চেয়ে সুস্বাদু আর কোনও রান্না আমি আজ অবধি খাইনি। এর কারণ কি এই যে ছোটবেলার স্বাদ গন্ধ স্মৃতির কোষে কোষে এমনভাবে ঢুকে যায় যে কিছুই আর একে সরাতে পারে না! নাকি অন্য কিছু! মা ছিল জাদুকরের মতো। মাঝারি কোনও হাঁস বা মুরগি রান্না করে বাড়ির বারোজন লোককে দুবেলা খাওয়াতো। তারপরও কিছু টুকরো রেখে দিত পরদিন সকালে রুটি-মাংসের নাস্তার জন্য। মা'র সবকিছুতে বড় জাদু ছিল। নিজের হাতে লাগানো নারকেল গাছের নারকেল দিয়ে মা তকতি বানাতো। যখনই তকতি খাই, মা'র ওই তকতির তুলনায়, বুঝি, যে, এ কিছুই নয়। মা প্রায় সারা বছরই নিজের বাগান থেকে তুলে শাক সবজি ফল মূল খাওয়াতো। ওগুলোর তুলনা ওগুলোই।

শুনেছি নিজের মা'র রান্নার প্রশংসা সবাই করে। রান্নাঘরই মেয়েদের জায়গা, পুরুষতান্ত্রিক এই ধারণার বিরুদ্ধে আমি ভীষণ প্রতিবাদ করি। কিন্তু রান্নাকে আমি নিখুঁত এক শিল্প বলে মেনেই মা'কে অসাধারণ শিল্পীর মর্যাদা দিচ্ছি, মা বলে মা'র প্রশংসা করছি না। শুধু মা'র নয়, নানির রান্নাও ছিল অতুলনীয়। নানির রান্নাঘরে পিঁড়িতে বসে ভাত খেতাম, মাছ বা মাংস দিয়ে খাওয়া শেষ হলে দুধভাত। দুধ খেলে, নানি বলতো, ব্রেন ভালো হয়। ছোট একটি শিং মাছের টুকরো, বা ছোট একটি মুরগির পাখনা, বা খাসির নলি, আর তার ঝোল দিয়ে এক থালা ভাত খেয়ে কী যে ভীষণ তৃপ্তি হতো! এখন এক বেলাতেই প্রায় এক কিলো মাছ বা মাংস খাওয়া হয়ে যায়। এতেও সেই আগের তৃপ্তি জোটে না!

ছোটবেলার একটি দৃশ্য আমার খুব বেশি ভালো লাগতো। নানির ঘরে বিকেলে বই পড়া হতো, একজন পড়তো, বাকিরা চুপ করে সেই পড়া শুনতো। মামা, খালা, মা, নানি, পড়শি—সবাই শুনতো। কোনও ধর্মের বই নয়। গল্পের বই। ওই বই পড়া শুনতে শুনতেই, আমার বিশ্বাস, আমার বই পড়ার অভ্যেস হয়েছে। বই পড়ার অভ্যেস থেকেই গড়ে উঠেছে বই লেখার অভ্যেস। নানির ঘরের ওই চমৎকার দৃশ্যটা আর কখনও আমি দেখতে পাবো না, যখন ভাবি, বুকের ভেতর নিঃশব্দে একটা কষ্টের স্রোত বইতে থাকে। বইতে থাকেই। মা নেই। সেই মামারা নেই, যে খালা বই পড়তো, সেও নেই। কেমন একটা নেই নেই চারদিকে। শুধু দৃশ্যটা গেঁথে আছে হৃদয়ে।

ছোটবেলার আনন্দগুলো বড় তীব্র ছিল। পরার তিনটে জামা হলে যে সুখ পেতাম, এখন আলমারির তিনশ জামাও সেই সুখ দেয় না। ছোটবেলার অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। সকালে মুড়িওয়ালা যেতো। 'মুড়ি...............'র শব্দ শুনে দৌড়ে বেরিয়ে মুড়িওয়ালাকে বাড়িতে ডেকে আনতাম। বাবা পুরো মুড়ির টিনই কিনতো। সেই টিনের মুড়ি সারা মাস খাওয়া হতো। কত কিছু নিয়ে যে ফেরিওয়ালা যেতো! চুরি ফিতে যেতো দুপুরবেলায়। ওসবে একটুও আকর্ষণ ছিল না আমার। বাদামওয়ালা, বুটওয়ালা, চানাচুরওয়ালা আইসক্রিমওয়ালা যেতো। বিকেলে বারান্দায় বসে ঝালনুন মিশিয়ে চিনেবাদাম খেতে খেতে গল্প করার সেই আনন্দ এখন আর নেই। সেই দুপুরবেলার তেঁতুল, সেই রোদে দেওয়া মা'র বয়ামের আচার! ওই জীবন আর শত চাইলেও ফেরত পাবো না। যা গেছে তা যেন চিরকালের জন্যই গেছে। বাড়ির মাঠে সেই বৌচি খেলা, সেই চোর চোর, সেই হাডুডু, সেই মার্বেল, সেই লাটিম, ডাংগুলি—আর কি ফিরে আসবে কখনও! আজকালকার বাচ্চারা কমপিউটার গেইম খেলে, ভিডিও গেইম খেলে, এসবই তাদের ভালো লাগে। আমরা একালে জন্মালে আমাদেরও কমপিউটার গেইমই ভালো লাগতো, মাঠে মাঠে দৌড়োনোকে অর্থহীন বলে মনে হত। ভাগ্যিস তখন জন্মেছিলাম! তখন জন্মেছিলাম বলে ধুলোবালিতে গড়াগড়ি খেয়েছি, যন্ত্রহীন সমাজের স্বাদটা পেয়েছি। হ্যারিকেন জ্বালিয়ে সন্ধেয় পড়তে বসেছি, হাতপাখায় বাতাস করে গ্রীস্মকাল কেটে গেছে, বুঝিনি কখনও যে বৈদ্যুতিক বাতি বা পাখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। টেলিভিশন ছিল না, রেফ্রিজারেটর ছিল না, মোবাইল ফোন ছিল না, কমপিউটার ছিল না, কিন্তু কখনও মনে হয়নি কিছুর আর প্রয়োজন আছে, যা আছে তার বাইরে। এখন এই যন্ত্রনির্ভর, অর্থনির্ভর সমাজের অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। ইতিহাস পড়ে জানা, আর নিজে যাপন করে জানায় কিছু তো পার্থক্য থাকে। একালের জীবন সেকালের জীবন থেকে ভিন্ন। দু'টো দু'রকম সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। এ আমাদের সৌভাগ্যই বটে। এক জীবনে কত কিছু দেখা হল। এখানে দাঁড়িয়ে অন্তত কিছুটা হলেও তো ধারণা করতে পারি ভবিষ্যৎটা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে।

দিন দিন মানুষের ধন দৌলত বাড়ছে, জৌলুস বাড়ছে, ভোগ বিলাস বাড়ছে, সাজগোজ বাড়ছে। আগে আমাদের অল্পতে সুখ হতো, এখন অল্পতে সুখ হয় না। আগে দরিদ্র ছিলাম আরো এবং এখনকার চেয়ে সুখী ছিলাম আরও।

সুখের সঙ্গে সত্যি বলতে কি ধন দৌলতের খুব একটা সম্পর্ক নেই।

  • Avijit Das and 871 others like this.
  • Shree Onil Kamar এইরাম স্বাদের স্বাদ আমাদের দেশের মগজহীন, পেশীওয়ালা, লিঙ্গধারীরা কি বুজে ॥
    5 hrs · Like · 8
  • Shyamal Sarkar amar chhelebelata tumi copy korechhile Taslima !!!!!
    5 hrs · Like · 2
  • Shuvadip Datta besh likhecho
    5 hrs · Like · 2
  • Shumon Ahmed রান্নাঘরই মেয়েদের জায়গা, পুরুষতান্ত্রিক এই ধারণার বিরুদ্ধে আমি ভীষণ প্রতিবাদ করি। কিন্তু রান্নাকে আমি নিখুঁত এক শিল্প বলে মেনেই মা'কে অসাধারণ শিল্পীর মর্যাদা দিচ্ছি,
    5 hrs · Like · 13
  • Abdullah Al Mamun সুখ ব্যাপারটা মনে হয় পুরোপুরি আপেক্ষিক!
    5 hrs · Like · 4
  • Ripan Mondal একটা সন্ধিক্ষণের বড় হয়েছি আমি এবং আমাদের প্রজন্মটা। আমি ছোটবেলায় কুমোরদের দেখেছি বড় বাঁশের ঝুড়িতে ভরে নৌকায় করে মাটির কলশি, পিঠে তৈরীর ছাঁচ, ভাত রাধার মাটির হাড়ি বিক্রি করতে আসত এবং বিনিময়ে কোন টাকা নিত না। টাকার পরিবর্তে নিত ধান, অর্থাৎ প্রকৃত...See More
    5 hrs · Like · 4
  • Shambhunath Paul শিশুকালের নিস্পাপ জীবনে মায়ের হাতের সব জিনিসই অমৃত লাগে, যা আমাদের সারা জীবনের সুখ স্মৃতি হয়ে থাকে বন্ধু!
    Shambhunath Paul's photo.
    5 hrs · Like · 9
  • Shekhar Bala Amar r apnar selebelay deksi sob e milea jay.
    4 hrs · Like · 1
  • Bhaskar Sen Ei obhignota ononyo , jibone ar dwitiyo bar asbar noy tai jabor katai sombol
    4 hrs · Like · 1
  • Subhro Maitra sritimedurota......Taslima, buro hochho?
    4 hrs · Like · 3
  • Nasreen Taslima শুভ্র, ততটা হইনি যতটা হবো.
    4 hrs · Like · 12
  • Subhro Maitra pls.....don't misunderstand. that is the last thing we wish...
    4 hrs · Like · 2
  • Ziarul Islam শীতের সকাল সত্যি ই দারুন
    4 hrs · Like
  • সুজন আরাফাত সুখের স্মৃতি, শীতের সকাল....
    4 hrs · Like · 1
  • সৌমিত্র চক্রবর্তী শেয়ার করলাম।
    4 hrs · Like · 2
  • Kartick Mondal প্রাচুর্য এর সাথে সুখের কোন সম্পর্ক নেই। আর ছেলেবেলার মা দিদিমার হাতের রান্নার তুলনা কোনদিন ই হবেনা। সেই শীতের সকালে গেরো করে বাধা চাদর আর সকালের রোদে পুকুরপাড় এ বসে পিঠে, পালো, বা মুড়ি খাওয়া। আহা তুলনাই আলাদা।
    4 hrs · Like · 3
  • Natasha Hasib কষ্ট লাগে যখন আমরা বর্তমানে এসে অতীতের আনন্দের সৃতিগুলো আসল ভাবে উপলব্দি করতে পারি। তখন মনে হয় ওই মুহর্ত গুলো যখন এক্সপেরিয়েন্স করছিলাম তখন যদি বুঝতাম কি হারিয়ে যাচ্ছে মুহুর্তে মুহুর্তে !
    4 hrs · Like · 9
  • Mynul Hasan Rasel সুখ!!
    3 hrs · Like
  • Anindita Biswas Roy Nasreen Taslima Dee, গাল গড়িয়ে জল নামলো । অসাধারণ লিখেছ । নিজের অনুভুতির সাথে মেলাতে পার্ছি তোমার এই রচনা কে ।
    2 hrs · Like · 8
  • Jahan Ara অনেক ভাল লাগলো
    2 hrs · Like
  • Roman Syedabadi মর্মস্পর্শী ভালবাসা ।
    2 hrs · Like
  • Rakib Uddin Siddiquei একেবারে শেকরেব কথা লিখেছেন আপনি, অনেক ধন্যবাদ, যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন সবসময়।
  • Anoma Chakma Anu Ja hoi sob kishu valor jonno hoi

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...