Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, February 8, 2013

ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনায় লাভ নেই ক্রেতার

ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনায় লাভ নেই ক্রেতার


ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনায় লাভ নেই ক্রেতার
সোমবার কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৩০,৭৪০ টাকা৷ অথচ, এদিনই দেশের প্রথম সারির তিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২৪ ক্যারাট সোনার ১০ গ্রাম কয়েনের দাম ছিল ৩২,০০০ টাকারও বেশি৷ বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি এদিন ১০ গ্রাম সোনার কয়েন বিক্রি করেছে ৩৫,০০০ টাকারও বেশি দরে৷ এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে কয়েনের দরের ফারাকও আকাশ পাতাল৷ বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে দাম অনেকটাই বেশি৷ 
ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে তাই লাভ নেই গ্রাহকদের৷ বাজারের থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে হয়৷ বেশি দাম না হয় হল, ব্যাঙ্ক থেকে একবার ওই কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়? ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস বিক্রি করা সোনা বা রুপোর কয়েন কেনে না৷ অতএব, যেতে হবে সেই জুয়েলারের কাছে৷ সেখানেও কী ঝামেলা কম? ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন যদি বা সোনার দোকানদার নেন, তার বদলে নগদ টাকা দেবেন না৷ পরিবর্তে, দোকানদারের কাছ থেকে তাঁর তৈরি গয়নাই নিতে হবে৷ 

কিন্তু কলকাতার পি সি চন্দ্র, সেনকো, অঞ্জলি জুয়েলার্স, তনিশক এরা কেউই ব্যাঙ্কের সোনার কয়েন বা বার নগদের বিনিময়ে কেনে না৷ তবে, তাঁদের দোকান থেকে কেনা কয়েন হলে সেটার বদলে ক্যাশ দেওয়া হতে পারে৷ এ ছাড়া সবই গয়না হিসেবে এক্সচেঞ্জ হয়৷ বউবাজারের গিণি এম্পোরিয়ামের সমর কুমার দে বলেছেন, 'আমরা সোনার কয়েন বিক্রি করতে খুব একটা উত্‍সাহী নই৷ অলঙ্কার বিক্রিতেই বেশি মনোযোগ দিই৷ 

তবে সোনার কয়েন বিক্রি হয় না এমন নয়৷ কেউ মেয়ে ছোট থাকাকালীন সোনার কয়েন কেনেন৷ যাতে বড় হয়ে ওই কয়েন থেকে কোনও গয়না তিনি মেয়ের জন্য তৈরি করে দিতে পারেন৷ নগদে লেনদেনের বিষয়ে আমরা আগ্রহী নই৷ সেই জন্য কয়েনের বদলে গয়না তৈরির উপরই বেশি জোর দিই৷' 'ব্যাঙ্করা বিক্রি হয়ে যাওয়া সোনার কয়েন কেনে না৷ তাই, গ্রাহকরা সেই কয়েন আমাদের কাছেই বিক্রি জন্য নিয়ে আসেন৷ আমাদের মতো মধ্যসত্ত্বাভোগী লোকেদের দরকার কী? সরকার তো সোনার চাহিদা কমানোর জন্য অনেক কিছুই করছে৷ কেন ব্যাঙ্কদের বলছে না বিক্রি করা সোনার কয়েন কিনে নিতে? 
ব্যাঙ্করা তো বিদেশি মুদ্রা বেচা-কেনা করে৷ ঠিক সেই রকম ভাবে - সোনার কয়েন কিনতে হলে একদাম, বেচতে হলে আরেক,' প্রশ্ন তোলেন এক স্বর্ণব্যবসায়ী৷ সত্যিই তো৷ দেশে সোনার চাহিদা কমাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ ব্যাঙ্কগুলিতে গোল্ড ডিপোজিট প্রকল্প চালু করা, গোল্ড ইটিএফগুলিকে ব্যাঙ্কগুলিতে সোনা জমা রাখতে বলা - এমন অনেক চিন্তা ভাবনাই চলছে৷ কিন্তু, একটা সময় ব্যাঙ্কগুলিকে সোনার কয়েন বিক্রি করার অনুমতি দিলেও, এখন তাদের কেন সেই সোনার কয়েন গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনে নিতে বলা হচ্ছে না? 'আর ব্যাঙ্কদেরই দেখুন৷ সবাই তো বলছে আমরা সোনার কয়েন আমদানি করে আনছি৷ তাহলে, এক ব্যাঙ্ক থেকে আরেক ব্যাঙ্কে একই ওজনের সোনার দামে এত ফারাক কেন? গ্রাহকরা কী তাহলে ব্যাঙ্ক থেকে সোনা কিনতে গিয়ে ঠকছেন না? বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সোনার কয়েনের দাম বিভিন্ন - এতে তো গ্রাহকরা আরও বিমূঢ় হতে বাধ্য,' ওই স্বর্ণব্যবসায়ী জানালেন৷ 

এক ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের কর্মী জানালেন, 'কয়েন গলিয়ে গয়না বানাতে গেলে গলানোর খরচ পড়ে৷ পাশাপাশি, রুপো ও তামা মিশিয়ে খাদ তৈরি করতে হয়৷ যাতে গয়নার নকশা আনা যায়৷ এই খরচের জন্য সোনার মূল্যটা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি, সোনার কয়েনটি কতটা খাঁটি সেটাও যাচাই করতে হয়৷ যতই বিদেশি সার্টিফিকেট থাকুক প্রতিটি দোকান গ্রাহকের থেকে কেনা সোনা যাচাই করে নিতে চান৷ তাই, সোনার বাজার দর যাই থাকুক, ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন কোনও দোকানে বিক্রি করতে গেলে দাম বেশ কিছুটা কম পাওয়া যায়৷' 

দীপাবলিতে ঢেলে সোনার কয়েন বিক্রি হয়েছিল বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে৷ পাল্লা দিতে ৭ শতাংশ ডিসকাউন্টে সোনার কয়েন দিচ্ছিল পোস্ট অফিসও৷ তবে, উত্‍সব ফুরোতে সোনার কয়েনের মোহও কেটে গিয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে দীপাবলিতে বিক্রি ভালো হলেও তা স্বর্ণব্যবসায়ীদের বিক্রিতে টেক্কা দিতে পারেনি৷ 

সোনার কয়েন মানুষ কেনে সেটার 'অ্যাসেট ভ্যালু'র জন্য৷ অর্থাত্‍ , প্রয়োজনে সেই সোনা বিক্রি করে বিপদের সময় হাতে কিছু নগদ আসে৷ কিন্তু, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস থেকে কেনা সোনার কয়েন নিয়ে গ্রাহককে নগদ দিতে চায় না কোনও স্বর্ণব্যবসায়ীই৷ সেটা বউবাজরের বহু পুরনো দোকান মালিক হোক, বা কোনও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুম৷ প্রত্যেকেরই বক্তব্য ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনার কয়েন গলিয়ে গয়না বানান, তো ঠিক আছে৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের গোল্ড কয়েনের বদলে নগদ মিলবে না৷ 

এই ব্যবস্থার জন্য বিপদে পড়েছে ব্যাঙ্কগুলিও৷ যে সোনার কয়েন ব্যাঙ্ক বিক্রি করছে, সেটা গ্রাহকের কাছ থেকে কিনতে পারবে না তারা৷ কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই অনুমতি দেয় না৷ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহককে সোনার কয়েন ও বার গ্রাহকদের কাছ থেকে কিনতে পারে না৷ শুধুমাত্র বিক্রি করতে পারে৷ সুতরাং গ্রাহকদের প্রথম চিন্তা হয়, ব্যাঙ্ক থেকে সোনার কয়েন কিনলে বিক্রি করবেন কোথায়, যেখানে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে৷ অন্যদিকে, স্বর্ণব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সোনার কয়েন গলিয়ে অলঙ্কার গড়ে দেওয়া যাবে৷ এবং তখন কিছু সোনা বাদ যাবে৷ তবে নগদ দেওয়া যাবে না৷ 

ব্যাঙ্ক কর্তাদের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সোনা বিক্রি করুক৷ কিন্তু কেনা-বেচা এই দুই অপশন খোলা না থাকলে ব্যাঙ্কগুলি সোনার বাজারে কীভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলবে? এ বিষয়ে আরবিআইয়ের বক্তব্য, রাতারাতি ব্যাঙ্ককে সোনা কেনার অধিকার দেওয়া যায় না৷ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকে সোনার কয়েন কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের নিরুত্‍সাহের আরও একটি কারণ রয়েছে৷ স্বর্ণব্যবসায়ী ও ব্র্যান্ডেড জুয়েলারি শো-রুমের চেয়ে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে ৫ বা ১০ গ্রাম সোনার কয়েনের দাম অনেকটাই বেশি৷ আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্যে দামের আকাশ পাতাল ফারাক৷ কখনও ৫ গ্রামের ক্ষেত্রে ফারাকটা দাঁড়াচ্ছে ২০০০ টাকা মতো৷ কখনও আবার ১০ গ্রামের ক্ষেত্রে দামের ফারাক হয়ে যাচ্ছে ৪০০০ টাকা মতো৷ এ বিষয়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের বক্তব্য, 'আমরা ২৪ ক্যারাট সুইস গোল্ড বিক্রি করি৷ তাই আমাদের দামটা একটু বেশি৷' আরবিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, সোনার কয়েনের দাম নির্ধারণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ সুতরাং ব্যাঙ্কদের নির্ধারিত মূল্যের উপর প্রশ্ন করার কেউ নেই৷ 

নিয়মের ফাঁসে আটকে গিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি, সঙ্গে ক্রেতারাও৷ অধিকাংশেরই বক্তব্য, যে ব্যাঙ্ক সোনা বিক্রি করছে সেই ব্যাঙ্ক সোনা কিনবে না কেন? গোলপার্কের বাসিন্দা পেশায় অধ্যাপিকা মীনা চৌধুরীর বক্তব্য, আমার কাছে ব্যাঙ্কের সার্টিফিকেট রয়েছে৷ আয়কর জমা দিই তার প্রমাণপত্র রয়েছে৷ বাকি যা যা নথি দরকার সোনা বিক্রি করতে গেলে সে সমস্তই রয়েছে৷ তা হলে ব্যাঙ্ক কেন আমার সোনার কয়েন কিনবে না? আমাকে কেন স্বর্ণব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সোনার কয়েনের বদলে কম মূল্যের গয়না নেব৷ যখন এক্সচেঞ্জ অপশন নেই তখন ব্যাঙ্কগুলিকে কেন সোনার বিক্রির অনুমতিই বা দেওয়া হল এ প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই৷ তাই, ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিস থেকে সোনা কেনার বদলে নামী সোনার দোকান থেকে কেনা ভালো৷ শুধু হলমার্ক প্রত্যয়িত হলেই হল৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...