দেশের অজস্র শিশুকে কি সত্যিইএই 'অবহেলার খাবার' দেওয়ার জন্য মিড ডে মিল চালু করা হয়েছিল? প্রশ্ন তুললেন অতীন্দ্রনাথ দাস
রাজাবাজারের এক তস্য গলি৷ অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধময়৷ নারকেলডাঙা মেন রোড থেকে বাঁ দিকে ঢুকে বেশ খানিকক্ষণ ডান দিক বাঁ দিক করে ওই গলির শেষ মাথায় ঘুপচি একটা ঘর৷ ঘাম, আবর্জনা আর পাশের খাল থেকে ভেসে আসা বিশ্রী একটা গন্ধ থমকে আছে ঘরটায়৷ জানলা বলতে কিচ্ছু নেই৷ মাথার উপরে টিমটিম করে জ্বলছে কম পাওয়ারের হলদেটে একটা বাল্ব৷ সেই ঘরেই কথা হচ্ছিল নানা বয়সের কয়েক জন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে৷ আলোচনার বিষয়, স্কুল৷ স্কুলের নানা অভিজ্ঞতা, বইপত্র, খেলাধুলো, ছুটির মজা, পরীক্ষা, সবই ঘুরেফিরে আসছিল কথায়৷
প্রথম দলের সদস্যরা বয়সে কিঞ্চিত্ ছোট, সাত থেকে বারোর মধ্যে৷ দ্বিতীয় দল কলেজপড়ুয়া, সবে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে৷ ওরা ক্রাই-এর ভলান্টিয়ার৷ রাজাবাজার অঞ্চলের ঘুপচি ঝুপড়িগুলোয় ঘুরে ঘুরে যে কাজটা ওরা করে, তার পোশাকি নাম 'স্কুল মনিটরিং'৷ অর্থাত্, ওই এলাকার খুদেরা স্কুলে ঠিকঠাক যাচ্ছে কি না, বাচ্চারা স্কুল শেষ করার আগেই কোনও জীবিকায় ঢুকে পড়ছে কি না, ইত্যাদি নানা তথ্য সংগ্রহ করাই তাদের কাজ৷ পাশাপাশি আরও একটা কাজ, ওই ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন দেখতে শেখানো৷
'স্কুলে মিড ডে মিল খেতে কেমন লাগে' প্রশ্নটা করতে না করতেই বোমার মতো ফেটে পড়ল বয়সে ছোট ভারতীয় নাগরিকরা৷ শবনম খাতুন নামে ছোট্ট একটি মেয়ে রিনরিনে গলায় চেঁচিয়ে উঠল, 'একদম গন্ধা খানা৷ বিলকুল গন্ধা৷' শবনমের একলা গলার পাশে তারপর জুড়ে যেতে থাকে একের পর এক আরও কয়েকটি কণ্ঠস্বর৷ ক্লাস ফাইভের মহম্মদ আমানুল্লা জানায়, ' ও খাবার গলা দিয়ে নামাতে পারবেন না আপনি৷' ক্লাস ফোরের ফতিমা অনুযোগ করতে থাকে, 'ভাতে প্রায়ই পোকা দেখতে পাওয়া যায়৷' তার পাশ থেকে পারভিন শোনাতে থাকে, 'ভাত বলতে যা দেয়, তাতে ভাতের চেয়ে পাথরই বেশি৷' এই ভাবে মিনিট কয়েকের মধ্যে রাজাবাজার এলাকার তস্য গলি কখন যেন মিলেমিশে যেতে থাকে বিহারের সারণ জেলার ধর্মসতী গণ্ডমান গ্রামের সঙ্গে- স্কুল চত্বরে সার দিয়ে শুইয়ে রাখা ছেলেমেয়েদের মুখগুলো ভেসে উঠতে থাকে বারবার৷ সে দিন দুপুরের খাবার মুখে দিয়ে ওরাও তো প্রথমে আপত্তিই জানিয়েছিল৷ শিক্ষকদের কাছে অনুযোগ করেছিল, 'আলু-সয়াবিনের তরকারির গন্ধটা যেন কেমন, ঠিক অন্যান্য দিনের মতো নয়৷' তার পরই বমি, হাতে-পায়ে খিঁচুনি, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ভয়াবহ লক্ষণ৷ বিকেল থেকেই খবর আসতে শুরু করে মৃত্যুর, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে৷ শেষমেশ, তেইশটি প্রাণের বিনিময়ে টনক নড়ে প্রশাসনের, খবরের কাগজ আর টেলিভিশন চ্যানেলে শুরু হয়ে যায় চর্চা৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শাসক দলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকে, শাসক দল পিঠ বাঁচাতে সামনে নিয়ে আসে খাবারে বিষ মেশানোর চক্রান্তের তত্ত্ব৷ মিডিয়ার কল্যাণে সামনে আসতে থাকে একের পর এক 'সনসনি খুলাসা', আসন্ন ভোটের বাজারে ২৩টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঠিক কতটা 'ডিভিডেন্ড' পাওয়া যাবে তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় চুলচেরা পর্যবেক্ষণ৷ পারস্পরিক দোষারোপ আর অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে, আদতে কিন্ত্ত হারিয়ে যায় ওই তেইশটি শিশুর মুখ, হারিয়ে যায় মৌলিক কয়েকটি প্রশ্ন৷ হারিয়ে যায় এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান, আমরা কি সত্যিই আমাদের ছেলেমেয়েদের কথা ভাবছি? আমরা কি এখনও সাবালকত্বের চৌকাঠ না-ছোঁয়া ভারতটির কথা ভাবছি? আমরা কি যে কোনও মূল্যে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে একশো শতাংশ সত্?
এগুলোই সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন৷ কেন সবচেয়ে জরুরি, তা বোঝার জন্য সামান্য কয়েকটি তথ্যের অবতারণাই যথেষ্ট৷ শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট ২০০৯) রূপায়ণের তিন বছর পর, অর্থাত্ ২০১৩-র ক্রাই-চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ দেশের ১৩টি রাজ্যের ৭১টি জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ১৮ শতাংশ স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার কোনও বন্দোবস্ত বা নির্দিষ্ট কোনও রান্নাঘর নেই৷ ওই একই সমীক্ষা থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য যে, অন্তত ২০ শতাংশ স্কুলে পরিশ্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই, আর ১২ শতাংশ স্কুলে পানীয় জলের উত্স (হ্যান্ড পাম্প, টিউব ওয়েল) রয়েছে স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে৷ শিক্ষার অধিকার আইনে কিন্ত্ত স্পষ্ট বলা রয়েছে, স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকতেই হবে (মনে করে দেখুন, সারণের স্কুলেও কিন্ত্ত রান্না হচ্ছিল কমিউনিটি হলে, এবং যেখানে রান্নার সামগ্রী রাখা ছিল, তার ঠিক পাশেই কীটনাশকের ডাব্বায় ছিল কালান্তক বিষ)৷
এখানেই শেষ নয়৷ বিহারের একটি ক্রাই-সহযোগী সংগঠন বিহার লোক অধিকার মঞ্চ সে রাজ্যের ২১টি জেলায় সম্প্রতি যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন মিড ডে মিল নিয়মিত হলেও তার গুণমান মোটেই ভালো নয়, পরিমাণও কম; আর ২১ শতাংশ উত্তরদাতার মতে মিড ডে মিল নিয়মিতও নয়, আর তার গুণমান সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো৷
এখান থেকেই আবার তা হলে ফেরা যেতে পারে রাজাবাজারে কমবয়সী সেই ভারতবর্ষের কাছে৷ কারণ রাজাবাজারের শবনমও তো এই একই কথা বলেছিল! 'একদম গন্ধা খানা৷' তার মানে মিড ডে মিলের গুণগত বিচারের ক্ষেত্রে বিরাট কোনও প্রভেদ নেই বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে? সত্যি বলতে কী, গত কয়েক দিনে মিড ডে মিল খেয়ে অসুস্থ হওয়ার একাধিক খবর এসেছে অসম, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু ও গোয়া থেকে৷ তা হলে, আসুন, মেনে নেওয়া যাক, শবনমের অভিযোগ, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা কোটি-কোটি শবনমদের অভিযোগ আসলে সত্যি৷ এবং এটাও সমান সত্যি যে, এর উত্তরে বলার মতো কোনও কথা এখনও আমাদের হাতে নেই৷
শেষে একটা ভালো খবর৷ বিহারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি হয়েছে যে, মিড ডে মিল পরিবেশনের আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তা নিজে খেয়ে তবেই শিশুদের খেতে দেবেন৷ খুব ভালো প্রস্তাব, দায়িত্বশীলতার পরিচায়কও বটে৷ কিন্ত্ত মনে রাখা ভালো যে, বিহারেও অনুরূপ নির্দেশিকা জারি থাকা সত্ত্বেও সারণের ঘটনা ঘটতে পেরেছে৷ এটা মনে করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই৷ আইন থাকা মানেই যে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া নয়, তা তো আমরা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় অহরহই দেখে থাকি৷ এ ক্ষেত্রেও যদি তা-ই ঘটে? আমরা আইনকে বাস্তবে রূপায়িত দেখতে পাব তো?
লেখক ক্রাই-চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তাhttp://eisamay.indiatimes.com/editorial/-/no-rice-have-only-stone/articleshow/21327963.cms
রাজাবাজারের এক তস্য গলি৷ অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধময়৷ নারকেলডাঙা মেন রোড থেকে বাঁ দিকে ঢুকে বেশ খানিকক্ষণ ডান দিক বাঁ দিক করে ওই গলির শেষ মাথায় ঘুপচি একটা ঘর৷ ঘাম, আবর্জনা আর পাশের খাল থেকে ভেসে আসা বিশ্রী একটা গন্ধ থমকে আছে ঘরটায়৷ জানলা বলতে কিচ্ছু নেই৷ মাথার উপরে টিমটিম করে জ্বলছে কম পাওয়ারের হলদেটে একটা বাল্ব৷ সেই ঘরেই কথা হচ্ছিল নানা বয়সের কয়েক জন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে৷ আলোচনার বিষয়, স্কুল৷ স্কুলের নানা অভিজ্ঞতা, বইপত্র, খেলাধুলো, ছুটির মজা, পরীক্ষা, সবই ঘুরেফিরে আসছিল কথায়৷
প্রথম দলের সদস্যরা বয়সে কিঞ্চিত্ ছোট, সাত থেকে বারোর মধ্যে৷ দ্বিতীয় দল কলেজপড়ুয়া, সবে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে৷ ওরা ক্রাই-এর ভলান্টিয়ার৷ রাজাবাজার অঞ্চলের ঘুপচি ঝুপড়িগুলোয় ঘুরে ঘুরে যে কাজটা ওরা করে, তার পোশাকি নাম 'স্কুল মনিটরিং'৷ অর্থাত্, ওই এলাকার খুদেরা স্কুলে ঠিকঠাক যাচ্ছে কি না, বাচ্চারা স্কুল শেষ করার আগেই কোনও জীবিকায় ঢুকে পড়ছে কি না, ইত্যাদি নানা তথ্য সংগ্রহ করাই তাদের কাজ৷ পাশাপাশি আরও একটা কাজ, ওই ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন দেখতে শেখানো৷
'স্কুলে মিড ডে মিল খেতে কেমন লাগে' প্রশ্নটা করতে না করতেই বোমার মতো ফেটে পড়ল বয়সে ছোট ভারতীয় নাগরিকরা৷ শবনম খাতুন নামে ছোট্ট একটি মেয়ে রিনরিনে গলায় চেঁচিয়ে উঠল, 'একদম গন্ধা খানা৷ বিলকুল গন্ধা৷' শবনমের একলা গলার পাশে তারপর জুড়ে যেতে থাকে একের পর এক আরও কয়েকটি কণ্ঠস্বর৷ ক্লাস ফাইভের মহম্মদ আমানুল্লা জানায়, ' ও খাবার গলা দিয়ে নামাতে পারবেন না আপনি৷' ক্লাস ফোরের ফতিমা অনুযোগ করতে থাকে, 'ভাতে প্রায়ই পোকা দেখতে পাওয়া যায়৷' তার পাশ থেকে পারভিন শোনাতে থাকে, 'ভাত বলতে যা দেয়, তাতে ভাতের চেয়ে পাথরই বেশি৷' এই ভাবে মিনিট কয়েকের মধ্যে রাজাবাজার এলাকার তস্য গলি কখন যেন মিলেমিশে যেতে থাকে বিহারের সারণ জেলার ধর্মসতী গণ্ডমান গ্রামের সঙ্গে- স্কুল চত্বরে সার দিয়ে শুইয়ে রাখা ছেলেমেয়েদের মুখগুলো ভেসে উঠতে থাকে বারবার৷ সে দিন দুপুরের খাবার মুখে দিয়ে ওরাও তো প্রথমে আপত্তিই জানিয়েছিল৷ শিক্ষকদের কাছে অনুযোগ করেছিল, 'আলু-সয়াবিনের তরকারির গন্ধটা যেন কেমন, ঠিক অন্যান্য দিনের মতো নয়৷' তার পরই বমি, হাতে-পায়ে খিঁচুনি, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ভয়াবহ লক্ষণ৷ বিকেল থেকেই খবর আসতে শুরু করে মৃত্যুর, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে৷ শেষমেশ, তেইশটি প্রাণের বিনিময়ে টনক নড়ে প্রশাসনের, খবরের কাগজ আর টেলিভিশন চ্যানেলে শুরু হয়ে যায় চর্চা৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শাসক দলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকে, শাসক দল পিঠ বাঁচাতে সামনে নিয়ে আসে খাবারে বিষ মেশানোর চক্রান্তের তত্ত্ব৷ মিডিয়ার কল্যাণে সামনে আসতে থাকে একের পর এক 'সনসনি খুলাসা', আসন্ন ভোটের বাজারে ২৩টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঠিক কতটা 'ডিভিডেন্ড' পাওয়া যাবে তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় চুলচেরা পর্যবেক্ষণ৷ পারস্পরিক দোষারোপ আর অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে, আদতে কিন্ত্ত হারিয়ে যায় ওই তেইশটি শিশুর মুখ, হারিয়ে যায় মৌলিক কয়েকটি প্রশ্ন৷ হারিয়ে যায় এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান, আমরা কি সত্যিই আমাদের ছেলেমেয়েদের কথা ভাবছি? আমরা কি এখনও সাবালকত্বের চৌকাঠ না-ছোঁয়া ভারতটির কথা ভাবছি? আমরা কি যে কোনও মূল্যে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে একশো শতাংশ সত্?
এগুলোই সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন৷ কেন সবচেয়ে জরুরি, তা বোঝার জন্য সামান্য কয়েকটি তথ্যের অবতারণাই যথেষ্ট৷ শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট ২০০৯) রূপায়ণের তিন বছর পর, অর্থাত্ ২০১৩-র ক্রাই-চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ দেশের ১৩টি রাজ্যের ৭১টি জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ১৮ শতাংশ স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার কোনও বন্দোবস্ত বা নির্দিষ্ট কোনও রান্নাঘর নেই৷ ওই একই সমীক্ষা থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য যে, অন্তত ২০ শতাংশ স্কুলে পরিশ্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই, আর ১২ শতাংশ স্কুলে পানীয় জলের উত্স (হ্যান্ড পাম্প, টিউব ওয়েল) রয়েছে স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে৷ শিক্ষার অধিকার আইনে কিন্ত্ত স্পষ্ট বলা রয়েছে, স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকতেই হবে (মনে করে দেখুন, সারণের স্কুলেও কিন্ত্ত রান্না হচ্ছিল কমিউনিটি হলে, এবং যেখানে রান্নার সামগ্রী রাখা ছিল, তার ঠিক পাশেই কীটনাশকের ডাব্বায় ছিল কালান্তক বিষ)৷
এখানেই শেষ নয়৷ বিহারের একটি ক্রাই-সহযোগী সংগঠন বিহার লোক অধিকার মঞ্চ সে রাজ্যের ২১টি জেলায় সম্প্রতি যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন মিড ডে মিল নিয়মিত হলেও তার গুণমান মোটেই ভালো নয়, পরিমাণও কম; আর ২১ শতাংশ উত্তরদাতার মতে মিড ডে মিল নিয়মিতও নয়, আর তার গুণমান সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো৷
এখান থেকেই আবার তা হলে ফেরা যেতে পারে রাজাবাজারে কমবয়সী সেই ভারতবর্ষের কাছে৷ কারণ রাজাবাজারের শবনমও তো এই একই কথা বলেছিল! 'একদম গন্ধা খানা৷' তার মানে মিড ডে মিলের গুণগত বিচারের ক্ষেত্রে বিরাট কোনও প্রভেদ নেই বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে? সত্যি বলতে কী, গত কয়েক দিনে মিড ডে মিল খেয়ে অসুস্থ হওয়ার একাধিক খবর এসেছে অসম, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু ও গোয়া থেকে৷ তা হলে, আসুন, মেনে নেওয়া যাক, শবনমের অভিযোগ, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা কোটি-কোটি শবনমদের অভিযোগ আসলে সত্যি৷ এবং এটাও সমান সত্যি যে, এর উত্তরে বলার মতো কোনও কথা এখনও আমাদের হাতে নেই৷
শেষে একটা ভালো খবর৷ বিহারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি হয়েছে যে, মিড ডে মিল পরিবেশনের আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তা নিজে খেয়ে তবেই শিশুদের খেতে দেবেন৷ খুব ভালো প্রস্তাব, দায়িত্বশীলতার পরিচায়কও বটে৷ কিন্ত্ত মনে রাখা ভালো যে, বিহারেও অনুরূপ নির্দেশিকা জারি থাকা সত্ত্বেও সারণের ঘটনা ঘটতে পেরেছে৷ এটা মনে করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই৷ আইন থাকা মানেই যে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া নয়, তা তো আমরা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় অহরহই দেখে থাকি৷ এ ক্ষেত্রেও যদি তা-ই ঘটে? আমরা আইনকে বাস্তবে রূপায়িত দেখতে পাব তো?
লেখক ক্রাই-চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তাhttp://eisamay.indiatimes.com/editorial/-/no-rice-have-only-stone/articleshow/21327963.cms
No comments:
Post a Comment