Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, July 19, 2013

উন্নয়নের খোঁজে

উন্নয়নের খোঁজে

উন্নয়নের খোঁজে
'প্রকৃতির কোলে পঞ্চায়েতরাজের ত্রিস্তর চাপানো সার৷ মাটিকে ক্রমশ বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে এসেছে৷ অধিক ফলনে, রাসায়নিক সারে মা-মাটি রক্তশূন্য হতে চলেছে৷' লিখছেন অশোককুমার কুণ্ডু 


'উন্নয়ন বাড়ি আছো?' 

উন্নয়ন কারও নাম হয়৷ হবে না কেন? পঞ্চায়েতে এই শব্দ খুবই লাগসই৷ আড়াই দশক আগে দল যখন একছত্র ক্ষমতায় পঞ্চায়েতে, তখনই আমার মামা তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের এমন নাম রেখেছিলেন৷ সর্বনাম আগে হত ঠাকুর দেবতার নামে৷ পরে এল অভিধান ঘেঁটে৷ আরও পরে মুম্বই আর টালিগঞ্জ এল ধেয়ে৷ গণ-জনের রুচি বহুমুখী৷ শুনবেন নামের কিনারা? পুরুল্যার হরলিক্স মুর্মু৷ বাঁকুড়ার জয়পুরে পেয়েছিলাম, ক্যানেল বাউরি৷ মনে পড়ে, 'মুক্তি' ছায়াছবির পরে, ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুকন্যাদের কত কত নাম হয়েছিল মুক্তি৷ দমদমের ঘুঘুডাঙায় আছে বুলগানিন (মহিলা) বসু৷ খানাকুলের মাজেদ মাস্টারের এক আত্মীয়ের নাম লাদেন হক৷ এবার বিশ্বাস হল তো আমার কথা? আছে, প্রতিটি নামের সঙ্গে যুক্ত ইতিহাসও৷ 

তা যাবো উন্নয়নের বাড়ি৷ চাঁপাডাঙা পেরিয়ে সোদপুর৷ পশ্চিমে গেলে, ডাইনে নিমড়ি আমার মামার বাড়ি৷ মামা পঞ্চানন পোড়েল৷ পঞ্চায়েত ভোটে একটু ঘোরা এবং অনেক দিন পরে আত্মীয়তার সম্পর্কের উপর কুলোর বাতাস দেওয়া৷ সাঁঝের শাঁখ বেজে গিয়েছে ঢের আগেই৷ আষাঢে়র পচা ভাদোরের ইনট্রো৷ নতুন পাতা রেল লাইন, বহু বহু প্রতীক্ষিত, হাওড়া টু আরামবাগ৷ উন্নয়ন প্রতি শ্বাসে৷ পথে অভয়বাণী৷ নো সাপ-ব্যাঙ৷ পেস্টিসাইটের কল্যাণে সকলে এখন নারায়ণের মাথার বালিশ৷ 

উন্নয়ন বাড়ি আছো? এটা কি পঞ্চানন পোড়েলের বাড়ি? 

কে আপনি? কোথা থেকে? (ফিশফিশিয়ে, খোকা হুট করে হুড়কো খুলিস না) 

আজ্ঞে আমি আপনাদের ভাগ্নে৷ আমার নাম..., আমার বাবার নাম...৷ 

ফোন করে আসবে তো৷ দিনের দিনে আসবে তো? দিনকাল বড়োই খারাপ৷ রক্তের এক রং৷ খুনির সাত রং৷ সমস্ত খবর নিয়ে, নাম ধাম জেনে, এমন কুটুম-কণ্ঠে ডাক দিয়েই কোপ! মারে হরি তো রাখে কে? 

তা আমি কি চলে যাব? সোদপুর থেকে হেঁটে এয়েচি৷ ঘরে না থাকতে দাও তো গোয়ালে একটু জায়গা দাও৷ মশা তাড়াতে একটু কেরোসিন দিও৷ খাবার লাগবে না৷ ব্যাগে জল-বিস্কুট আছে৷ 

দরজা খুলল৷ তিনটি প্রাণী একসঙ্গে৷ মামার হাতে পাকা বাঁশ৷ উন্নয়নের হাতে কাটারি৷ মামীর হাতে আঁশ বঁটি৷ এমনই আপ্যায়ন দিয়ে মামার বাড়ির শুরুয়াত৷ 

উন্নয়ন- দাদা, শোনোনি কিছু? পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ অঞ্চলের চার জন নিখোঁজ৷ গেল মাসে দুটো খুন৷ গত সপ্তাহে গোয়ালে আগুন, পরাণপুরে৷

সেই জন্যেই তো আসা৷ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে লিখব বলেই তো আসা৷ 

মামিমা- ওরে ছেলেটাকে আগে ঘরে বসা৷ কী লজ্জা! কী লজ্জা! 

তোমাদের কী দোষ! কতকাল যোগাযোগ রাখিনি আমি৷ মোবাইল জলে পড়ে গেল, তার পর সব মুছে গেল নাম-ঠিকানা৷ 

দাদু শতবর্ষ ছুঁতে চলেছেন৷ সেই চরকার যুগের মানুষ৷ পরাধীন ভারতে পুলিশের মার খেয়েছেন বিস্তর৷ স্বাধীনতা সংগ্রামের পেনশনটুকুও নেননি৷ সে যুগের ম্যাট্রিক অ্যাপিয়ার্ড, মানে ফেল বা পরীক্ষায় বসতে পারেননি৷ আরামবাগের 'গান্ধী', প্রফুল্ল সেনের যোগ্য শিষ্য৷ বলেছিলেন, 'আমি সংগ্রাম বেচি না৷ দেশের জন্যে জেল খেটে টাকা!' পরে, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা পেয়েছিলেন৷ দাদু, এ অঞ্চলে পঞ্চায়েতের উন্নয়ন কেমন চলছে? 

শোনো দাদুভাই, এ হল অ্যাপ্লায়েড পলিটিক্স৷ আমি খাদি৷ আমার ছেলে তোমার মামা বাদী, কমরেড৷ তার বড়ো ছেলে তৃণমূল৷ সোদপুরে প্রাইভেট অফিস করেছে৷ কী সব কম্পিউটর৷ তবে একটা যুগের গাদ পরের যুগে৷ তার গাদ তার পরে৷ মানে বুঝলে ভাই? না তো৷ 

এত সহজ সমাজবিদ্যা৷ কংগ্রেসের পরিত্যক্ত গাদে ভরে গেল সিপিএমে৷ সিপিএমের ওয়েস্ট, জঞ্জালে জন্ম তৃণমূলের৷ এর পরে কী জানো? 

না তো৷ 

কল্কি অবতার! শেষে বাজারে ডুগডুগি৷ কলির শেষ৷ নাও রাত হল৷ খেয়ে নাও৷ 

মামা- কাল সকালে সকলের সঙ্গে তোমার ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা হবে৷ চাইলে আমার সদরে বসেই সকলকে পাবে৷ চাইলে স্পট ঘুরে দেখে নাও, গাড়ির ব্যবস্থাও হবে৷ সব পার্টির লোককেই পাবে৷ তবে অন্য সব টিমটিম৷ আছে শুধু লাল আর সবুজ৷ 

আহা! বহুকাল এমন বর্ষণমুখর সকাল দেখিনি৷ মোরামের লাল রং ধুয়ে যাচ্ছে৷ গড়িয়ে, জল উপচে আসছে, মৃত্তিকার সরবত্‍, সফেন৷ আহা! ফুল সহ ঘাস, বর্ষণের জলে ধোয়া, কতকাল দেখিনি৷ এমন প্রকৃতির কোলে পঞ্চায়েতরাজের ত্রিস্তর চাপানো সার৷ গ্রামের মাটিকে ক্রমশ বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে এসেছে৷ অধিক ফলনে, রাসায়নিক সারে, মা-মাটি হোয়াইট ডিসচার্জ করতে করতে রক্তশূন্য হতে চলেছে৷ কোন গণতন্ত্র একে বাঁচাবে কে জানে! সকাল পার হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে মোবাইলে, মামার কেরামতিতে প্রথম দফায় দশজন বাইকে চড়ে এসে গেল৷ কথাবার্তা হল৷ কমরেডরা সব বললেন, আমরাই জিতছি৷ একটু পরে মামাতো ভাইয়ের কল্যাণে তৃণমূলরা এলেন বাইকে৷ এঁরাও বললেন, আমরা বিপুল ভোটে লিড দেব৷ 

তা হলে হারবে কে, বলুন তো? আমি প্রশ্ন তুললাম৷ 

মুখ চাওয়া-চায়ি৷ উসখুস৷ মামিমা কোল্ডড্রিংক্স আনলেন৷ সকলে পান করলেন৷ দাদু থেলো হুঁকো ছেড়ে বললেন, 'আমি বলতে পারি কে হারবে৷ তার আগে বলতে চাই কে জিতবে৷' সকলে সায় দিল৷ আমি তাজ্জব হলাম নন কলেজিয়েট, শতবর্ষ ছুঁইছুঁই এক গান্ধীবাদীর রিয়েলিস্টিক রসিকতায়৷ 

দাদু- জিতবে দরিদ্র৷ হারবে উন্নয়ন৷ থেলো হুঁকো টানতে টানতে ঘরে ঢুকলেন বৃদ্ধ৷ যেন রঙ্গমঞ্চের ড্রপ-সিন পড়ে গেল৷ 

এর পরে দু' দলের চার জনের সঙ্গে 'গোল চ্যাটাই'৷ গরম হল আবহাওয়া৷ পরস্পরের প্রতি দোষারোপ, যেন সুপার ফসফেট৷ সামলানো দায়৷ কেচ্ছার কৃত্তিবাসী৷ পারলে যেন দু' একটা লাশ পড়ে যাবে৷ নিতান্ত ভোটের সময় বুথ গোড়ায়, তাই সামলে গেল৷ 

মামা- আরে ভাগ্নে, গ্রুপ ডিসকাসন সম্ভব নয়৷ খুনোখুনি হলে আমার সদর রক্তারক্তি হত৷ আমি সিপিএম বড়ো ছেলে তৃণমূল৷ শেষে ছোট ছেলে উন্নয়নকে চিহ্নিত করত নকশাল বলে৷ সদরে ডেকে এনে খুন৷ তোমার কিছু হবে না৷ একে রিপোর্টার তায় ভাগ্নে৷ তুমি এ অঞ্চলে পরিচিত, তোমার লেখার মাধ্যমে৷ তবে বলা তো যায় না৷ 

মামার অন্ন, মামার আশ্রয়, মামার গাড়ি৷ তেল কার কে জানে৷ বোধ করি মহাকালের৷ নিঃশব্দে ভ্রমণ সুন্দর৷ কিন্ত্ত পঞ্চায়েত সম্পর্কে বাখানি, ওই ফাটা রেকর্ডে পোঁতা পিন৷ মানুষ কত অসহায়৷ লক্ষ-কোটি মানুষ শ' কয়েক লিডারের হানায়৷ প্রাণ খুলে কেউ কথা বলে না৷ আজ পঞ্চায়েতে গরম মশলার ঝাঁঝে সকলেই সতর্ক৷ অথচ কত ক্ষোভ-অভিমান! সে শোনার মানুষ কই? উচ্চ মঞ্চে লিডার থেকে চুনো-চানা সকলেই শোনাতে চায়৷ শোনার মানুষ নেই৷ জেমিনি পিকচার নিবেদিত, সমাজ কো বদল ডালো৷ 

বিকেলে বিদায় পর্বে মামা একটা আঞ্চলিক লিটিল ম্যাগ হাতে দিয়ে বললেন, 'যেতে যেতে পড়ো না৷ তারকেশ্বরে পাঁচটা-আটান্নর আগে বেশ কিছুটা সময় পাবে৷ তোমার বহু পুরনো বন্ধুর কাগজ৷ 'কাগুজে বাঘ'৷ তুমি তো আর খোঁজ রাখো না৷ দুঃখ করছিল সে দিন৷ অভিমান করে বলল, 'ও তো বড়ো কাগজের বাঘ৷' 

তারই লেখা 'পাঁচ গাঁয়ের পাঁচালি'র খণ্ড চিত্র৷ ঋণ: কাগুজে বাঘ, আরামবাগের নিগ্রো কবি সাধন বারিক৷ 

ষোলো-আঠারো বছরে 'লাল নক্ষত্র', চার পাতার লিফলেট করে নকশালি বলে জেলবাস৷ বেরিয়ে এসে এধার ওধার৷ এর আগে কত ছোট সে, প্রফুল্ল সেনের (আরামবাগের গান্ধীর) ন্যাওটা৷ ফাই ফরমাস- এটা সেটা৷ তাঁরই খাদ্য আন্দোলনকে আঘাত করে, 'পান্তা ভাতে নুনের ছিটে / ওলো সই, তাই বা কই৷' হৈ হৈ৷ মার্কসিস্টরা দেওয়াল লিখন করেছিলেন সে সময়ে৷ চিরজীবন 'কাগুজে বাঘ' দিয়ে প্রতিবাদ করছেন৷ তারই পাঁচালি৷ সময়-সমাজ বদলের ডাক৷ হায়, পানা পুকুরের জল৷ তরঙ্গ ওঠে তরঙ্গ মিলায়ে যায়৷ আবার যেই-কে-সেই৷ জলের মুখ ঢাকে কচুরিপানার শরীরে৷ 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...