Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Wednesday, November 5, 2014

কুলঙ্গারদের হাতে মতুয়া সমাজের ভার ! শরদিন্দু উদ্দীপন

কুলঙ্গারদের হাতে মতুয়া সমাজের ভার ! শরদিন্দু উদ্দীপন

বেছন ধান ভাল না হলে বতরের ফলনে যে তার প্রভাব পড়ে তা ঠাকুরনগরের ঠাকুরবংশের বর্তমান প্রজন্মকে দেখলেই বোঝা যায়। আজ খবরে প্রকাশ নিজের মাতৃসমান জেঠিমাকে খুনের হুমকি দিয়েছেন মঞ্জুল পুত্র সুব্রত ঠাকুর। দুর্দান্ত! বাপকা বেটাই বটে! কিছুদিন আগে মঞ্জুল ঠাকুর যেমন দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন। মতুয়া মহাসংঘের বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরকে পুলিশ ডাকতে হয়েছিল। তেমনি সুব্রত ঠাকুর ও তার মদ্যপ চেলা চামুণ্ডাদের হুমকির জন্য সদ্য প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতা ঠাকুরকেও পুলিশ প্রহরার আশ্রয় নিতে হল। মহামতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের বংশের এ হেন কদর্য পরিণতি যে আপামর মতুয়া ভক্তদের বিভ্রান্ত করে তুলবে তার কোন সন্দেহ নেই। অনেকে আঘাত পাবেন তাদের প্রনম্য ঠাকুর বংশধরদের আত্মঘাতী প্রবণতা দেখে। কিন্তু ঠাকুর বংশের এই প্রশাখার বাড় বৃদ্ধি সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল তারা কিন্তু ওবাক হননি। কারণ তারা জানেন যে বিষবৃক্ষ থেকে বিষফলই পাওয়া যায়। 

 

কদাচারের উৎসঃ 

ঠাকুরনগরের এই ছোপের উৎপত্তিই হয়েছে কদাচারের মাধ্যমে। মহামতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের বড়ছেলে শশিভূষণ থেকেই কদাচারের সূচনা। নানা কারণে গুরুচাঁদ ঠাকুর শশিভূষণকে ত্যাজ্যপুত্র করতে চেয়েছিলেন। শশিভূষণের বড় ছেলে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর গুরুচাঁদের মতকে অগ্রাহ্য করেই জোদ্দার জমিদারদের দ্বারা পরিচালিত কংগ্রেস পার্টির সাথে সখ্যতা শুরু করেন। গুরুচাঁদ চেয়েছিলেন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল যেখানে সংখ্যা অনুপাতে ভাগিদারী পাওয়া যাবে। শিক্ষা, চাকরী, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ক্রমশ উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে পারবে বাংলার দলিত, নিষ্পেষিত জাতি সমূহ। কিন্তু ১৯৩৭ সালে গুরু চাঁদের মৃত্যু হলে প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে এক ঝাঁক নেতা কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়। অন্যদিকে মুকুন্দ বিহারী মল্লিকের নেতৃত্বে একদল নেতা গুরুচাঁদের দেখানো পথেই ব্রিটিশ শাসনের প্রতি নৈতিক সমর্থন ধরে রাখেন। প্রমথ রঞ্জন চেয়েছিলেন সকল ক্ষমতা তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হবে তাই তিনি মুকুন্দ বিহারী মল্লিককে ও সহ্য করতে পারেন নি, পরবর্তী কালে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকেও সহ্য করতে পারতেন না। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিডিউলড কাস্ট লীগ। যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল হন সভাপতি। এই বছরেরই প্রতিষ্ঠিত হয় সর্ব ভারতীয় তপশিলি জাতি ফেডারেশনের বঙ্গীয় শাখা। যোগ্যতা অনুসারে এই বৃত্তর সংগঠনের সভাপতিও হন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জে আয়োজিত প্রাদেশিক সম্মেলনে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল ঘোষণা করেন যে এই ফেডারেশনের দায়িত্ব হবে তপশিলি জাতিগুলির জন্য পৃথক রাজনৈতিক আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তপশিলি জাতির নেতাদের মধ্যে বিভাজনের ফলে বাংলার ৩০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ২৪টিই কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করে। প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর নির্দল হিসেবে জয়লাভ করলেও ক্ষমতার লোভে কংগ্রেসে যোগদান করেন।

 

আম্বেদকর বিরোধী শিবিরে প্রমথ রঞ্জনঃ

স্বাধীন ভারতের স্বতন্ত্র সংবিধান রচনা করার জন্য গণপরিষদ গঠনের ঘোষণা করা হলে সারা ভারত তপশিলি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ডঃ বি আর আম্বেদকরকে গণপরিষদে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুকুন্দবিহারী মল্লিক এই গণপরিষদে নির্দল প্রার্থী হতে চাইলেও পরে তিনি আম্বেদকরকে ভোট দিতে মনস্থির করেন। কিন্তু কংগ্রেস পার্টির ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে পি আর ঠাকুর ডঃ বি আর আম্বেদকরের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান। যদিও যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডলের উদ্যোগে ও প্রথিতযশা নেতা নেতৃদের  অক্লান্ত পরিশ্রমে কংগ্রেস ও পি আর ঠাকুর আম্বেদকরের গণপরিষদে যাওয়া আটকাতে পারেননি।

 

পাপেট-পুতুল এবং পি আর ঠাকুরঃ

জাতীয় ক্ষেত্রে ডঃ আম্বেদকরকে আটকানোর জন্য কংগ্রেস তৈরি করেছিল জগজীবন রাম নামে এক তাবেদার এবং বাংলায় যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডলকে আটকানোর জন্য ব্যবহার করেছিল পি আর ঠাকুরকে। জাতীয় নির্বাচনে পি আর ঠাকুর কয়েকবার নির্বাচিত হলেও জনগণের জন্য তিনি প্রায় কিছুই করেননি। কিছু করার দক্ষতাও তার ছিলনা। মূলত তিনি ছিলেন কংগ্রেসের হাতের পাপেট। দম দেওয়া পুতুল। ফলে আচিরেই কংগ্রেস তাকে প্রত্যাখ্যান করে। এর পরে বার কয়েক নির্বাচনে দাঁড়ালেও তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তার নিজের মানুষেরাই তাকে অপাংক্তেয় হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ বয়সে শুধু পদধূলি বিতরণ করে ভক্তের দান-দক্ষিণা গ্রহণ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিলনা।

 

বিষবৃক্ষের ফলঃ 

এই পি আর ঠাকুরের বড় ছেলে সদ্য প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। মতুয়া মহাসংঘের প্রাক্তন সভাপতি এবং বনগাঁ কেন্দ্রের নির্বাচিত সাংসদ। সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান কতটুকু ছিল তা অণুবীক্ষণেও দেখা যাবেনা। পি আর ঠাকুরের ছোট ছেলে মঞ্জুল ঠাকুর। বর্তমান তৃণমূল সরকারের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী।  তাঁর বেড়ে ওঠার কাহিনী একালের রগবাজদেরও লজ্জা দেবে। গুরুচাঁদের পথ ও মতুয়া দর্শনের সাথে তাঁর কোন যোগাযোগ নেই। কোন কালে ছিলও না।  নিরীহ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের প্রতি তাঁর অভব্য আচরণ ঠাকুর বাড়ির ঘোরতর সংকটের মূল কারণ। মূলত মতুয়া মহাসংঘের পদ নিয়ে এদের মারামারি। কপিল ঠাকুর জীবিত কালে ছিলেন মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি। তখন মঞ্জুল ঠাকুর ছিলেন সহসভাপতি আর তাঁর পুত্র সুব্রত ঠাকুর সম্পাদক। এখন মঞ্জুল ঠাকুর সভাপতি এবং তাঁর ছেলে সুব্রত ঠাকুর সম্পাদক। মোদ্দা কথায় মতুয়া মহাসংঘ এঁদের পারিবারিক রাজতন্ত্র। এই রাজতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদে থাকতে পারলে আজন্ম গোলাম অসংখ্য মতুয়া ভক্তদের প্রণামির টাকায় পেট ভরানো যায়। মতুয়া শক্তি  দেখিয়ে রাজনীতিতে কল্কে পাওয়া যায় এবং নির্বাচিত হতে পারলে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া যায় বিষ বৃক্ষের ফল।    

 

সুব্রত ঠাকুর যথার্থই বাপ কা বেটা !!  

মঞ্জুল ঠাকুরের ছেলে এই সুব্রত ঠাকুর। তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতা। কিছুদিন আগে ফেশবুকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। পরবর্তী কালে জানা যায় যে তৃণমূল দল তাঁর জেঠিমা মমতা ঠাকুরকে বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে মননয়ন দিচ্ছে। এ জন্য বেজায় চটেছেন সুব্রত। আরো খবর পাওয়া যায় যে তিনি গোপনে গোপনে বিজেপির সাথে যোগাযোগ করছেন এবং সেই কারণেই তৃণমূলের পদ ছাড়তে মনস্থির করছেন কিন্তু সেখানেও বাঁধ সেধেছে কেডি বিশ্বাস। কারণ কেডি বিশ্বাস পূর্বে এই কেন্দ্র থেকেই বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন। তাই সুব্রত বিষ ছড়াতে শুরু করেছেন।  আজন্ম বেড়ে ওঠা হিংসা প্রতিহিংসার কাদা ছড়াচ্ছেন। মাতৃসম জেঠিমাকে মাতাল বন্ধুদের দিয়ে খুনের হুমকি দিচ্ছেন। ধিক্কার জানাই তাঁর এই অভব্যতার। ধিক্কার জানাই তাদের পারিবারিক সংস্কৃতির এই নিম্নগামী প্রবণতাকে। সাবধান হতে আহ্বান করি সমস্ত মতুয়া ভক্তদের। কারণ এই স্খলিত পরিবারের কাছ থেকে মতুয়াদের পাওয়ার কিছু নেই। এরা শুধু নিতে শিখেছে, দিতে শেখেনি। তাই সাধু সাবধান...।।    

 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...