Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Monday, January 19, 2015

ফিরে দেখা ২০০৬ : আওয়ামী আন্দোলনের একটি খণ্ডচিত্র ৩ দিনে ৩২ হত্যা ॥ সম্পদ ধ্বংস হাজার কোটি ও আর্থিক ক্ষতি দু’হাজার কোটি টাকার

ফিরে দেখা ২০০৬ : আওয়ামী আন্দোলনের একটি খণ্ডচিত্র
৩ দিনে ৩২ হত্যা ॥ সম্পদ ধ্বংস হাজার কোটি ও আর্থিক ক্ষতি দু'হাজার কোটি টাকার 
সরদার আবদুর রহমান : বর্তমানে চলমান বিরোধীজোটের আন্দোলন কর্মসূচির বিরুদ্ধে মহাজোটের পক্ষ থেকে সমালোচনার তুফান উঠলেও আওয়ামী লীগের আন্দোলনকালে কী ঘটেছিলো তা এক চরম নিষ্ঠুরতার দলিল হয়ে আছে। দলীয় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবরোধের নামে মাত্র ৩ দিনের নজরবিহীন ১৪ দলীয় নৈরাজ্য ও তা-বে সারা দেশে অন্তত ৩২টি প্রাণ ঝরে যায়। আহত ও পঙ্গুত্বের শিকার হয় দুই সহস্রাধিক মানুষ। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকার। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর লুটপাটের কারণে সম্পদ বিনষ্ট হয় আরো প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার। সে সময়ের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে এই চিত্র পাওয়া যায়। তিন দিনের সেই অরাজক কর্মসূচি বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ইমেজকে বহির্বিশ্বে করে প্রশ্নবিদ্ধ। শান্তির জন্য সদ্য 'নোবেল প্রাইজ' প্রাপ্তির গৌরবকে ধূলায় মিশিয়ে দেয় ১৪ দল। একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অধীনে নির্বাচিত একটি সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের স্পর্শকতার সময়কে এই অরাজকতা সৃষ্টির জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই। সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান যাতে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করতে না পারেন সেজন্যই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন লগি-বৈঠার কর্মসূচি। ২৮ অক্টোবরই ছিল কেএম হাসানের দায়িত্ব নেয়ার দিন। আর সেদিন ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসে লগি-বৈঠার বর্বরতম ও নজিরবিহীন হত্যাকান্ডের নির্মম উল্লাস। এর জের ধরে দেশে এক পর্যায়ে জরুরী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র হয় নির্বাসিত।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৬ সালের ২৮, ২৯, ও ৩০ অক্টোবর ১৪ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় তা যে কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে নজিরবিহীন ঘটনা বলে পর্যবেক্ষরা মনে করেন। এ সময়ে সৃষ্ট সংঘাতে সারাদেশে নিহত হয় কমপক্ষে ৩২ জন মানুষ। এরা মারা যায় মহাজোটের লোকদের গুলীতে, বোমায়, ছুরিকাঘাতে ও নির্মম লাঠিপেটায়। এর মধ্যে প্রথম দিন নিহত হয় ১৪ জন, দ্বিতীয় দিন ১৪ জন, তৃতীয় দিন ৩ জন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৫টি জেলায় এসব হত্যাকা- সংঘটিত হয়। নিহতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, খুলনা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, চট্রগ্রাম বিভাগে ৪ জন ও সিলেট বিভাগে রয়েছে ২ জন। এ সময় আহত হয় আরও প্রায় ২ হাজার মানুষ। অনেক আহত মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়। কারো কারো কব্জিসহ দুই হাত কেটে নেয়া হয়, রগ কেটে দেয়া হয়। এসব ঘটনায় প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, ছোড়া হয় হাত বোমা-পেট্রল বোমা। এছাড়া ব্যবহার করা হয় লাঠি, লগি, বৈঠা, তলোয়ার, রামদা, ছুরি প্রভৃতি। কর্মসূচি চলাকালে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা চালায় ব্যাপক হাঙ্গামা। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট থেকে রেহাই পায়নি পৌরসভা ভবন, সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক। রাজনৈতিক দলের অফিস, ব্যক্তিগত চেম্বার, বাসগৃহ, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি বাস, ট্রাক, জীপ, কার, পিক-আপ, টেম্পু ও রিকশা প্রভৃতি। কোনো কোনো এলাকায় বাড়ি লুটপাট করতে গিয়ে উঠোনের টিউবওয়েল পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অবরোধের ৩ দিনে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে দেশজুড়ে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়, তেমনি জাতীয় অর্থনীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকা স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৪ দল। এ সময় সড়ক ও রেলওয়ে বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহণ তথা আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, দিনাজপুরের হিলি, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, যশোরের বেনাপোল প্রভৃতি স্থল বন্দরের পণ্যবাহী শত শত ট্রাক আটকা পড়ে। চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দরে সৃষ্টি হয় জাহাজ জট। এ জন্য শিল্প মালিকসহ আমদানি-রফতানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও লাখ লাখ শ্রমিক ও দিনমজুর হয়ে পড়ে কর্মহীন। বাজারে পণ্যসরবরাহ না থাকায় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। এ জন্য ক্রেতাদের দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থদন্ড। পচনশীল জাতীয় কোটি কোটি টাকার পণ্য পচে বিনষ্ট হয়। তিন দিন যাবত দেশের কোটি কোটি মানুষকে অস্ত্র ও সন্ত্রাসের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়। তথ্যে জানা যায়, ১৪ দল তাদের এই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকহারে সন্ত্রাসী ভাড়া করে। তাদের হাতে তুলে দেয় নানাবিধ অস্ত্র।

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...