Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, January 16, 2015

সিংহ দর্শণ বিদ্যুত চক্রব্রতী


সিংহ দর্শণ

বিদ্যুত চক্রব্রতী

আহমেদাবাদ থেকে শ্রীহরি ট্রাভেলসের বাসে আমরা স্বামী-স্ত্রী রাত ১১ টায় শুয়ে পড়লাম। কপাল ভাল বাসে ভিড় ছিলো না ।ভিড় থাকলে সাফোকেশন হোতো। শুয়ে গেলাম বটে তবে খুব একটা আরাম বোধ হোলো না। যাক ভোর সকাল সাতটা নাগাদ সাশান গির পৌঁছে গেলাম। সাদামাটা ছোট জায়গা- ওই অরণ্যকুলে কিছু দোকান পাট। অনেক গাড়ি। সবে ভোর হচ্ছে। চা কফি সব বিশ রূপোইয়া। বাসের ড্রাইভারকে বলেছিলাম দ্য গির রিসর্ট এ বাস দাঁড় করাতে । করালেন না । উল্টে দেড় কিলোমিটার দূরে নামিয়ে আমাকে বললেন " সাব।।পহলে বোল দেতে তো ...অব দেড় কিমি পয়দল চলনা পড়েগা'। এবার একটা অটো রিক্সা ধরে দ্য গির রিসর্ট।ভাড়া ১৫০টাকা। অসহায় ট্যুরিস্টদের কিছু করার নেই। পাশেই লর্ডসের হোটেল। অনেক সুন্দর। 
সকাল থেকেই ময়ুর দেখা শুরু। তিন রাত ছিলাম আসলে ময়ূরদের একটা দল ওখানের জঙ্গলে বাসিন্দা। রিসর্ট এর কর্মী বদ্রিসভাই জানালো যে ২১৫০টাকা খরচ করে আপনি ওপেন সাফারি করতে পারেন কিন্তু সিংহ দেখার শখ না মেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বাসে যান তবে সিংহ দেখার সম্ভাবনা ১৫ আনা কারণ ওই নাকাতে জন্তুদের একটা হাসপাতাল আছে। উলটে খরচা মোটে ৭৫ টাকা। অতএব বাস যাত্রাই স্থির হোলো। এবার রিসর্ট থেকে গির জঙ্গলে যাবার বাহন এর ব্যবস্থা করতে গিয়ে দেখলাম শুরু হোলো গাড়ি ভাড়া ৬০০টাকা থেকে আসলে দাঁড়াল ৮০০ টাকা। রাজি না হওয়াতে বোধ হয় কিপ্টে বা নির্ধন ভাবল তাই ডেকে দিলো ছপ্রি। ছপ্রি হোল হুড হীন তেচাকা গাড়ি। ঢাকা হীন অটো রিক্সা। আমার স্ত্রীর ইল্লতে লাগলো । কিন্তু নাচার।

অরণ্যের বন্দোবস্ত খুবই ভাল।প্রথমেই আলো আঁধারিতে সিংহী মামীর দেখা পেলাম ।একপাশ থেকে আরেক পাশে ধীর স্থির ভাবে গমন করছেন। তারপর একদল ময়ুর ময়ূরী । এরপর পেলাম শকুন- শকুনীর একটা দল। কালো সাদা বড় সাইজের। এরা লুপ্ত প্রায় প্রাণি এখন। বাস একজায়গায় দাঁড়িয়ে গেল। দু'জন সিংহী আর তাদের চারজন ছানা-পোনা গাছে ছায়ায় বসে খেলছে। তারপর আর কিছুই তেমন চোখে পড়লো না । হঠাত সামনে চলে এলো দুটো নীল গাই আর এক দংগল চিতল হরিণ।

ছপ্রির চালক ইসমাইল । প্রায় ১২ কিমি আমরা দু'জন ইস্মাইলের সঙ্গে বকর বকর করলাম। আমাদের কথোপকথন এর নির্যাস তুলে ধরছি ।
সাব , এই যে রাস্তা দেখছেন এই রাস্তা অনেক পুরানো । সব রাজ্যেই পি ডব্লু ডি রাস্তা সারায় রাস্তা বানায় ,মোদি সরকার ও তাই করেছে কিন্তু নাম হোলো মোদির। 
বললাম তা কি করে হয় । আসার সময় অনেক চওড়া মসৃন রাস্তাও তো দেখলাম।
হাঁ সাব ও গুলো মোদিজীর সময় বনেছে।বেশির ভাগ রাস্তাই সি পি ডব্লু ডি বানিয়েছে । কারখানাও বনেছে। কিন্তু গরীব মানুষের কি লাভ হয়েছে বলুন তো?
কেন ? চাকরি তো পেয়েছে।
দেখুন গরীব মানুষের তো আর জমি নেই। জমি বেচেছে জাঠেদার প্রচুর পয়সা পেয়েছে ওরা। কারখানাতে চাকরি করছে বেশির ভাগ কাজ জানা বাইরের লোকেরা। কোলকাতার লোক ও আছে।
সে তো ভাই হবেই। এক জায়গার শ্রীবৃদ্ধি হলে সেখানে বাইরের লোক আসবেই।
কিন্তূ সাসন গির এর কোন উন্নতি হয়নি । এখনো জঙ্গল সাফারি তে গাড়ি খাটিয়ে দিন গুজরান করতে হয়। সিজনের ব্যবসা। শুনছি জংগল সাফা করে কারখানা বসাবে। 
বললাম তুমি কি জানো বঙ্গালে কোনো জাঠেদার নেই। সমস্ত ক্ষেতি জমি কিসানদের নিজেদের ? 
শুনেছি সাব ! সিঙ্গুর থেকে টাটাকে ভাগিয়ে দিয়েছে, লাভ হয়েছে সানন্দের জমির মালিকদের।
হ্যাঁ! আহমেদাবাদে শুনলাম বটে। ওদের জমির মালিকরা সরকারকে জমি বেচেছে। কোটি কোটি টাকা পেয়েছে। 
সাব !এক লাখের জমি এক কোটিতে বেচেছে। জনমজুর কিষাণরা কেউ কেউ কারখানায় চাকরি পেয়েছে। সবাই নয় । আখেরে আম আদমির লাভ কি হলো?

সিংহ দেখতে এসেছিলাম। বদলে সিংহী আর তার শাবক দেখা হোল। 
ফিরে এলাম রিসর্টে ।

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...