পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হিংস্র প্রাণী বা পতঙ্গকেও আগুন দিয়ে পোড়ানো নিষেধ।তারপরেও শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমান উনাদের দেশে হরতাল ও অবরোধের নামে আশরাফুলমাখলুকাত মানুষকে নির্বিচারে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় কি করে?
হাজার হাজার বাসে আগুন লাগানো হয় কি করে?
আবারো অগ্নিসংযোগ। আবারো অগ্নিদগ্ধ। রাজধানীতে একের পর এক বাসে অগ্নিসংযোগ করছে হরতাল-অবরোধকারীরা। দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার অনুসন্ধানে জানা গেছে,এবারের হরতাল অবরোধে শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং অগ্নিদগ্ধ হয়েছে ৪ জন চালক।
২০১৪ সালের শুরুতেই ২ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় একটি গরুবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলা চালায় বিএনপি-জামাতের অবরোধকারীরা। এতেঅগ্নিদগ্ধ হয় চালকসহ দুই সবজি ব্যবসায়ী।
২০১৪ সালটি ছিল আগুনে ঝলসে মৃত্যুবরণ করার বছর। ২০১৪ সালে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিএনপি-জামাতের পেট্রোল বোমা হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু লোক।
২০১৪ সালের শেষের দিকে গত ২৮ ডিসেম্বর বিএনপি'র ডাকা হরতালের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমায় একই পরিবারের তিনজন অগ্নিদগ্ধহয়।
আর আন্দোলনের নামে ২০১৩ সালের হাঙ্গামায় ৯৪ জন আগুনে পুড়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছে। অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিলডিফেন্সের তথ্যানুসারে, ২০১৩ সালের প্রথম ১০ মাসে সারা দেশে হরতাল ও বিভিন্ন সহিংস কর্মসূচি চলাকালে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের আর্থিকক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত আগুনে পুড়েছে মোট ১০৭৪টি যানবাহন।
লেখাবাহুল্য, মাটি, পানি, বাতাসের মতো পরিচিত একটি বস্তু হলো আগুন। আগুনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীর মানুষের উপকার সাধনের লক্ষ্যে এবং পরপারে মানুষকে শাস্তিপ্রদানের লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর আগুন আর পরকালের আগুনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। যেমন, পৃথিবীর আগুন অপেক্ষা পরকালের আগুন ৭০গুণ বেশি শক্তিশালী এবং সেআগুনের রঙ ভয়ানক কালো।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ১৪৫ জায়গায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আগুনের কথা উল্লেখ করেন। এর অধিকাংশ বক্তব্যই পরপারের আগুনকে ঘিরে। সেই আগুনের উত্তপ্ততা স্পষ্টভাবেআঁচ করা পৃথিবীর মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
পৃথিবীতে আগুনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তাদের প্রয়োজনে এ আগুন ব্যবহার করবে; কিন্তু মানুষের নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় সীমা ছাড়িয়েগেছে। শক্রতামূলকভাবে দোকানে বা ফ্যাক্টরীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে অসহায় মানুষ পুড়ে মরে। মাঝে মাঝে এমন সংবাদও পাওয়া যায় যে, দোকানের মালিক ইন্স্যুরেন্সের টাকারলোভে কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। শত শত নিরীহ মানুষকে এভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার পদ্ধতিটি জাহিলিয়া যুগ তথা সভ্যতা-পূর্ব যুগের মানুষের কাছেও অপরিচিত। যারা নিরীহমানুষকে পৃথিবীর লাল আগুনে পোড়াচ্ছে, তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পরকালে অবশ্যই সেই কালো আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা অতি নির্মম ও মহা পৈশাচিক। এতে শিরকের বিষয়টি সংযুক্ত হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনোমানুষ, জীব-জন্তু বা কোনো ফসল-গাছ-পালা আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, æআগুন দ্বারা কেবল মহান আল্লাহ পাক তিনিই শাস্তি দেবেন। মহান আল্লাহপাক তিনি ছাড়া আর কারো আগুনের দ্বারা শাস্তি দেয়া উচিত নয়।" (বুখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধেও কোনো যুদ্ধে কাউকে আগুনে পোড়ানোর অনুমতি দেননি। কারণ জাহান্নামে মহানআল্লাহ পাক তিনি অপরাধীদের জন্য আগুনের শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। জাহান্নামকে আরবীতে 'নার' বা আগুন বলা হয়েছে। তাই এ শাস্তি কোনো মানুষ দিতে চাইলে এতে মহান আল্লাহ পাকতিনি বিশেষ শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতায় যেন উনার সমাসীন হওয়ার দাবি চলে আসে।
অথচ এখন আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদেরকে অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢালা হচ্ছে, আগুন জ্বালানো হচ্ছে।
মূলত, মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ তো অনেক উপরের বিষয়; এমনকি কুকুর-শৃগালও যাতে কষ্ট না পায় সেটাই হলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা। এ জন্যই খলীফাতুলমুসলিমীন আমিরুল মু'মিনীন হযরত ফরূক্বে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, æফোরাতের তীরে যদি একটা কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তবে আমি হযরত ইবনেখাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।" সুবহানাল্লাহ!
এই যদি হয় সম্মানিত ইসলামিক মূল্যবোধ, তবে কোথায় আজ মুসলমান? শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশে এক মুসলমান কী করে নির্বিচারে অপর মুসলমানের শরীরে আগুনধরিয়ে দিতে পারে? মূলত, এদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান উনারা অপর মুসলমান দ্বারাই এত বর্বরতা, নির্মমতা, বীভৎসতার শিকার হচ্ছে এ কারণেই যে, এদেশের মুসলমানরা নামমাত্রই মুসলমান। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের সম্মানিত ইসলামী শিক্ষা দেয়া হয়নি। সম্মানিত ইসলামী আদর্শের প্রচার করা হয়নি।
সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়, বর্তমান গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলোর কোন্দল, সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির নামে অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মানুষহত্যা থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ পালন করতে হবে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত জীবনী মুবারক আলোচনা ও অনুসরণ করতে হবে। আগুন দিয়ে মানুষকে জ্বালানো এবং সম্পদ পোড়ানোর সম্পর্কে সচেতনতা সম্বলিতসম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং উনার শিক্ষা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞায়।
No comments:
Post a Comment