Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Saturday, July 27, 2013

‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে শুধুমাত্র হিংসা দিয়ে প্রতিরোধ করা কিন্ত্ত কঠিন’

'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে শুধুমাত্র হিংসা দিয়ে প্রতিরোধ করা কিন্ত্ত কঠিন'

'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে শুধুমাত্র হিংসা দিয়ে প্রতিরোধ করা কিন্ত্ত কঠিন'
নোট বই বা রেকর্ডার সামনে রেখে ইন্টারভিউ বলতে যা বোঝায় তাতে প্রবল আপত্তি৷ তাই জুলাই মাসের মাঝামাঝি এক সকালে ঘণ্টা তিনেক ধরে কথা৷ একান্ত সাক্ষাত্‍কারে চিকিত্‍সক ও বিশ্রুত মানবাধিকার কর্মী বিনায়কসেন৷ কথায় সৌমিত্র দস্তিদার


সৌমিত্র দস্তিদার: মাওবাদী সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া আদিবাসী শিক্ষিকা সোনি সোরি-র বিষয় নিয়ে আপনি তো খুবই চিহ্নিত মনে হল৷
বিনায়ক সেন: স্বাভাবিক৷ অত অল্প বয়সী মেয়েটির উপর যে ধরনের জঘন্য অত্যাচার হয়েছে তা যে কোনও সভ্য সমাজের কাছেই অত্যন্ত নিন্দের৷ এখন তো সবাই জানেন যে, মেয়েটিকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ওর যোনি ও পায়ুতে পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ইলেকট্রিক শক দেওয়া, এ ছাড়া আরও নানা ধরনের শারীরিক অত্যাচার ওর উপর হয়েছে৷ একজন ডাক্তার হিসেবে বুঝি কতটা ঝড় সোনির শরীর ও মনের উপর দিয়ে গিয়েছে৷ এটা যে কোনও সংবেদী লোককেই যন্ত্রণা দেবে৷ 

অথচ সোনি সোরি যে মাওবাদী তা-ও তো প্রমাণ হয়নি৷ প্রথমত, মাওবাদী হলেও কোনও মহিলার উপরে অত্যাচার করা যায় না৷ দ্বিতীয়ত, সোরির সঙ্গে পরোক্ষ মাওবাদী যোগও প্রমাণ করা যায়নি৷ 

আপনাকেও তো অযথা হয়রানি করা হয়েছিল মাওবাদী সন্দেহে৷ আসলে ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিষয় নিয়ে নানা তত্ত্ব ম্যানুফ্যাকচারিং করা হয়৷ আমার ক্ষেত্রে তো চার্জশিট প্রথমে যা পেশ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে পরে নিজেদের পছন্দ মতো মনগড়া অভিযোগ সাজিয়ে আর একটা পাতা মূল অভিযোগপত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল৷ যা পৃথিবীতে কোথাও হয়নি৷ কোর্টেও বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন এটা আগের চার্জশিটে ছিল না কেন৷ সরকার জানিয়েছিল ওই পাতাটা নাকি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল৷ বুঝুন অবস্থা৷ পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করার পরে যা যা ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছিল তা ওরা একটা ভিডিও করে, আমরাও করি, ব্যাগটাও আমরা দিই৷ তাতে কোনও কিছুই আপত্তিজনক কিছু ছিল না৷ ভিডিওই তার প্রমাণ৷ কিন্ত্ত রাজ্য সরকার তা জানত বলে নিজেদের তোলা ভিডিও কোর্টে প্রমাণ হিসেব দাখিলই করেনি৷ আমার ক্ষেত্রে বিচারের নামে কী প্রহসন হয়েছিল তা নিয়ে দিলীপ ডিসুজারএকচমত্‍কারবইআছে৷পড়লেবুঝবেনছত্তিশগড়সরকারকীভাবেমাওবাদী বলে সন্ত্রাসছড়িয়েদেওয়ারমিথ্যেকৌশলনিচ্ছেবছরেরপরবছর৷ 

আপনার সংগ্রাম নিয়ে তো এক ডকুমেন্টারি ফিল্মও তৈরি হয়েছে? হ্যাঁ, মিনি মাথুর ছবিটা করেছে৷ অমর্ত্য সেন দিল্লিতে তা রিলিজ করেছিলেন৷ 

আপনার গ্রেপ্তারের পরে সারা বিশ্বে তুমুল প্রতিবাদ হয়েছিল৷ আপনাকে গ্রেপ্তার করেছিল বিজেপি৷ কংগ্রেসের ভূমিকা কী ছিল? তারা প্রতিবাদ করেনি? কংগ্রেসের একটা অংশ বিশেষ করে অজিত যোগীরা আরও দু' একজন খুবই সক্রিয় ছিলেন আমাকে জেল থেকে মুক্ত করার কাজে৷ তারা কয়েকবার জেলে এসে আমার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন৷ সে দিক দিয়ে অবশ্যই অন্তত কংগ্রেসের একটা অংশের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক ছিল৷ 

জেলের সময়টা কেমন ছিল? দেখুন বন্দি থাকতে কারই বা ভালো লাগে৷ তা ছাড়া আমার চিন্তা ছিল আমার অজস্র অত্যন্ত গরিব আদিবাসী পেশেন্টদের নিয়ে৷ তবে এটা ঠিক যে, জেলে না গেলে জীবন দেখা হয় না৷ কত বছর ধরে আমি মানবাধিকার আন্দোলন করছি, কিন্ত্ত জেলে গিয়েই বুঝলাম কী ভাবে রাষ্ট্র প্রতি দিন নিরীহ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে চলেছে৷ যার অধিকাংশ খবরই বাইরের দুনিয়ায় এসে পৌঁছয় না৷ 

গ্রেপ্তারের পর ধরমটোরিতে আপনার হেলথ সেন্টারে আমি গিয়েছিলাম৷ দরজা জানলা বন্ধ৷ চার পাশে কেমন ভয় ভয় ভাব৷ কেউ কথা বলছে না৷ অদ্ভুত এক নীরবতা৷ মনে হচ্ছে অদৃশ্য চোখ যেন আমাদের লক্ষ্য করছে৷ আমাদের বন্ধুরা সতর্ক করেছিল যেন বেশিক্ষণ না থাকি৷ স্পেশাল পুলিশ অফিসার বা এস পি ও-র খপ্পরে পড়তে পারি৷ তা হলে বিপদ অবশ্যম্ভাবি৷ তাই তো বলছি ছত্তিশগড়ের পরিস্থিতি বাইরে থেকে বোঝা কঠিন৷ ওখানে পুরোপুরি গুন্ডা, ক্রিমিনাল রাজ চলছে৷ অনেক বলার পরে এক আদিবাসী মহিলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাবি খুললেন৷ বুঝলাম কত যত্নে আপনি এটা গড়ে তুলেছিলেন৷ (ম্লান হেসে) ওখানে একটা প্যাথলজি ল্যাব করেছিলাম৷ এক দিনে রিপোর্ট দিতাম৷ আমার বেশির ভাগ পেশেন্ট ছিলেন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত৷ সরকারি ল্যাবে রক্ত রিপোর্ট আসতে আসতে সাত দিন লেগে যেত৷ তখন চিকিত্‍সা করাই কঠিন৷ ফলে আমাদের ল্যাবের সুনামও দূর দূরান্তে ছড়িয়ে ছিল৷ আমার গ্রেপ্তারের পর সত্যি সত্যি সমস্যা যা তা তো ওই গরিব আদিবাসীদেরই৷ আমার এ কথা ক্রমশই আরও বেশি করে মনে হচ্ছে যে, বর্তমান ভারতে জনস্বাস্থ্যই কিন্ত্ত সব থেকে বড়ো পলিটিক্যাল ইস্যু৷ বিষয়টি যথেষ্ট জটিলও বটে৷ তা এই কারণে আরও জটিল যে দূর থেকে এই সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করা অসম্ভব৷ যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার ন্যূনতম কাঠামোটুকুও নেই, সেখানে জীবন ধারণ একেবারে দৈনন্দিন স্তরে ঠিক কী পরিমাণ বিপজ্জনক তা আলো ঝলমল শহরে বসে মধ্যবিত্তরা কল্পনাও করতে পারবেন না৷ তবে কল্পনা করতে চাইবেন কি না, সে-ও আর এক প্রশ্ন৷ মুশকিল এই যে ভারতে মধ্যবিত্তরা যে জগতে বাস করেন, তা ওই সব আদিবাসীর থেকে, দেহাতি গ্রাম-গ্রামাঞ্চল থেকে অনেক দূরে৷ বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ আলাদা একটা ব্রহ্মাণ্ড৷ এই ব্রহ্মাণ্ডে বসে আদিবাসীদের নানা রকম অধিকার, বেঁচে থাকার নানা রকম শর্ত প্রতি দিন কী ভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা বোঝা খুবই দূরূহ৷ তবে ওই যা বললাম, বুঝতে চাওয়াটাও একটা ইচ্ছের প্রশ্ন৷ সেই ইচ্ছেটা থাকা খুব জরুরি, কিন্ত্ত আছে কি? 

মাওবাদী রাজনীতি নিয়ে কিছু বলবেন? দেখুন, যত দিন যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে, এত রক্তারক্তি, হিংসা দিয়ে সমাজকে পাল্টানো যায় না৷ তাই মাওবাদীদের অস্ত্র দিয়ে সমাজ বদলের স্বপ্ন মনে হয় না সফল হবে৷ বিপরীতে সব সময় মনে হয়, রাষ্ট্রেরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার৷ ধৈর্য ধরে, আন্তরিকতা দিয়ে আলোচনায় বসে শান্তির পথ বের করা দরকার৷ 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...