Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, July 19, 2013

একতরফা ভোটে হিংসার বলি ৫, অবরোধে নেমে বিফল বামেরা

একতরফা ভোটে হিংসার বলি ৫, অবরোধে নেমে বিফল বামেরা

একতরফা ভোটে হিংসার বলি ৫, অবরোধে নেমে বিফল বামেরা
হাওড়ায় পাঁচলায় মধ্য ধুনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ দখলের প্রতিবাদ -- আনন্দ সরকার
এই সময়: নির্বাচন কমিশনের হুঁশিয়ারি, প্রশাসনের আশ্বাস, কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখরাঙানি- সবই মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে শনিবার তৃতীয় দফার পঞ্চায়েত ভোটে শেষ হাসি হাসল সেই হিংসাই৷ ২০০৮-এর পর ২০১৩, ভোটে হিংসার সেই ঐতিহ্যেই ফিরল বাংলা৷ তৃতীয় দফার ভোটেও চারটি তাজা প্রাণ হিংসার বলি হল৷ এ নিয়ে তিন দফায় ৯ জেলায় আট জন প্রাণ হারালেন৷ আগের দফায় কেবল বর্ধমানেই মারা যান চার জন৷ এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মারা গিয়েছেন তিন জন৷ আর এক জন উত্তর ২৪ পরগনায়৷ নিহতদের একজনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি৷ বাকি তিনজন তৃণমূল, সিপিএম, এসইউসির সমর্থক৷ একদা তৃণমূলের শরিক সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছোড়া গুলিতে৷

খুনোখুনির পাশাপাশি ভোট শুরুর আগে থেকে রাত পর্যন্ত চলল বোমা-গুলি-ইট-পাটকেলের লড়াই৷ সেই সঙ্গে বুথ দখল, ব্যালট ছিনতাই, প্রার্থী-এজেন্টকে মারধর, ভোটের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর, ভোটার ও ভোট কর্মীদের শাসানি, পুলিশকে আক্রমণ-পরিবর্তনের জমানাতেও নির্বাচনী সন্ত্রাসের সাড়ে তিন দশকের বাম সংস্কৃতিই এ দিন প্রত্যক্ষ করল রাজ্যবাসী, গোটা দেশ৷ দিনভর বাংলার তিন জেলার ভোটে চোখ রেখেছিল সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরা৷

শুক্রবারের ভোটেও শাসকদল তৃণমূল ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা করবে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল বিরোধী সিপিএম৷ সেই সঙ্গেই তারা জানিয়েছিল, বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনীও ছাড়বে না৷ ঘোষণা ছিল, গ্রামে অন্যায় হলে প্রতিরোধ হবে শহরে৷ গৌতম দেবের মতো নেতারা হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, তৃণমূল হাঙ্গামা করলে রেল থেকে জাতীয় সড়ক, এমনকী বিমানবন্দরও অবরোধ করবে দলের স্বেচ্ছাসেবকরা৷ দুই ২৪ পরগনায় এ জন্য ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে তৈরি থাকবে বলেও ঘোষণা করেছিলেন গৌতমবাবুরা৷ কিন্ত্ত বাস্তবে দেখা গেল, সিপিএম গর্জালেও বর্ষাল তৃণমূলই৷ তিন জেলাতেই শাসকদল প্রায় একতরফা ভোট করলেও দু-একটি জায়গা ছাড়া কোথাও সে ভাবে রুখে দাঁড়াতে পারেনি সিপিএমসহ বামেরা৷ এমনকী তাদের রাস্তা, রেল অবরোধও কোথাও পিটিয়ে, কোথাও স্রেফ চমকে তুলে দেয় তৃণমূল৷ সেই সঙ্গে পুলিশের তত্‍পরতা তো ছিলই৷ তারা যথারীতি রাজনৈতিক প্রভুদেরই আজ্ঞা পালন করেছে৷

বরাবরই এই তিন জেলার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল রাজ্য-রাজনীতি৷ আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এই পঞ্চায়েত ভোটই ছিল শাসক-বিরোধী, সব পক্ষের কাছেই সেমি-ফাইনাল৷ নীরব, অদৃশ্য পরিবর্তনের মতো অভাবনীয় কিছু ঘটে না-থাকলে সেমি-ফাইনাল, ফাইনাল ম্যাচ সিপিএমের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হতে চলেছে৷ এ দিন ভোট শেষের আগেই সেই দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা৷ বৃষ্টি ভেজা দিনে বুথে বুথে যখন হাজার হাজার মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে, তখনই সিপিএম নেতারা সত্তরের ভোট সন্ত্রাসের কথা বলতে শুরু করেন৷ স্বভাবতই তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হলেও কংগ্রেস সিপিএম এক সুরে কথা বলতে পারেনি, যা আগের দু'টি দফায় শোনা গিয়েছিল৷ গত শতকে সত্তরের দশকে কংগ্রেস জমানাতেই ভোটে রিগিং-ছাপ্পা-সন্ত্রাসের সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল৷

তিন জেলার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ছিল তৃণমূলের দখলে৷ সিপিএমের দখলে ছিল হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা৷ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটের পর এই তিন জেলারই রাজনৈতিক কর্তৃত্ব চলে যায় তৃণমূলের হাতে৷ তিন জেলার ১২টি লোকসভার একটিও বামেদের হাতে নেই৷ এই তিন জেলাতেই রয়েছে বিধানসভার ৮০টি আসন৷ এর মধ্যে হাওড়ার ১৬টি আসনের একটিও বামেদের দখলে নেই৷ উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩ ও ৩১টি৷ এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় তিনটি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চারটি আসন বামেদের হাতে আছে৷ লোকসভা ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে পঞ্চায়েত ভোটই ছিল সিপিএমের শক্তি পরীক্ষা দেওয়ার শেষ সুযোগ৷ তিন জেলার ভোট দেখে কট্টর সিপিএমপন্থীরাও দলের দুর্বল পারফরমেন্সে হতাশ৷ কমিউনিস্ট পার্টি টিকে থাকে সংগঠনের জোরে আর লৌহদৃঢ় সেই সংগঠন অগ্নিপরীক্ষা দেয় শাসকের আক্রমণ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে- সিপিএমের পত্র-পত্রিকায় আজও গর্ব করে লেখা হয় সেই কথা৷ ভোট চিত্র বলছে, বিধানসভা ভোটে মাজা ভাঙা সিপিএম এখনও উঠে দাঁড়াতে পারেনি৷ দলের অন্দরে ইতিমধ্যেই কথা শুরু হয়েছে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতৃত্ব বদল ছাড়া কি সিপিএমের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?

২০০৩-এ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল এক দফায়৷ একদিনেই হিংসার বলি হয়েছিলেন ২৯ জন৷ শুধু মুর্শিদাবাদেই মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের, যেখানে আগামী সোমবার ভোট নেওয়া হবে৷ কেন্দ্রের রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী নিজের জেলায় তৃণমূলের থাবা থেকে কংগ্রেসকে কতটা রক্ষা করতে পারবেন এ দিন থেকেই সে প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে৷ ২০০৮-এ তিন দফার পঞ্চায়েত ভোটেও হিংসা এড়ানো যায়নি৷ সে বার ভোটের দিন নির্বাচনী হিংসার বলি হয়েছিলেন প্রায় ২৩ জন৷ হিংসার পাশাপাশি রিগিং-ছাপ্পা, বুথ জ্যাম, বিরোধী শিবিরের ভোটারদের চমকানোর মতো পরিচিত দৃশ্যই এ দিন ছিল তিন জেলার বুথে বুথে৷ ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম যে ভাবে বিরোধী-কণ্ঠ নির্মূল করতে প্রশাসনকে পাশে নিয়ে একতরফা ভোট করত, সেই একই ভূমিকায় তৃণমূলও৷ দিনের শেষে গোটা পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখার চেষ্টা হয়েছে৷ তৃণমূল বিরোধীরা যেমন বলেছেন, এই কি বদলা নয় বদলের দৃষ্টান্ত? কেউ অধীর চৌধুরীর কথা ধার করে বলেছেন, হার্মাদ গিয়ে উন্মাদ এসেছে৷ আর কট্টর বাম-বিরোধীদের বিগত শাসকদের বিঁধে বলতে শোনা গিয়েছে, দ্যাখ কেমন লাগে!

তবে এই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মধ্যেও দলীয় মেরুকরণের ঊর্ধ্বে থাকা মানুষের কথায় উদ্বেগ-উত্‍কণ্ঠাই ঝরে পড়েছে৷ ভোটে হিংসাই কি রাজ্যের ভবিতব্য, এই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে তাদের৷ সেই সঙ্গে মুখে মুখে ফিরেছে আরও একটি বিষয়, ২০০১ থেকে ২০১১- এই এক দশকেই কিন্ত্ত বিধানসভার তিনটি এবং লোকসভার দু'টি সাধারণ নির্বাচনে এ রাজ্যই ছিল কার্যত হিংসামুক্ত৷ সেই পাঁচটি নির্বাচনই অবশ্য হয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...