Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Friday, July 19, 2013

কোনও হুজ্জুতি নেই, তবু ভোটে সাড়া দিল না কামদুনি

কোনও হুজ্জুতি নেই, তবু ভোটে সাড়া দিল না কামদুনি

কোনও হুজ্জুতি নেই, তবু ভোটে সাড়া দিল না কামদুনি
হিমাদ্রি সরকার

'ক্যায়সা ভোট হ্যায় ইয়ে! সব আপনা আপনা কাম কর রহা হ্যায়, পর ভোট দেনে কোই নেহি যা রহা হ্যায়! ইতনা সন্নাটা কঁহি নহি দেখা৷'
কামদুনির ভোটারদের এহেন আচরণে রীতিমতো হতবাক মধ্যপ্রদেশে থেকে আসা সিআরপিএফের এক জওয়ান৷ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাঙালি জওয়ানের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে কথাগুলি বলে ফেললেন তিনি৷ পরে কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ওই জওয়ান জানালেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোট তিনি দেখেছেন৷ কিন্ত্ত কামদুনির মতো ভোট তিনি কস্মিনকালেও দেখেননি৷ তবে যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ ভোট দিতে বাধ্যও করেনি৷ বস্ত্তত, কামদুনির মতো ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট তিন জেলার কোথাও হয়নি৷ 

মাওবাদীদের হুমকি নেই৷ সন্ত্রাসের আবহ নেই৷ ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে কোনও পোস্টারও নেই৷ তবুও কামদুনি মুখ ফিরিয়ে থাকল পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে৷ গোটা কামদুনির একটাই দাবি, আগে অপরাজিতার খুনিদের শাস্তি হোক, তার পর ভোটের কথা ভাবা যাবে৷

কামদুনির ভোটার সংখ্যা ৯৫২৷ একটিই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র৷ কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এ দিন কামদুনিতে দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৮৫টি৷ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২৬৬, মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশও নয়৷ গ্রামবাসীদের মধ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও উত্‍সাহ না থাকলেও প্রশাসন কিন্ত্ত তত্‍পর৷ কামদুনি মোড় থেকে গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দু'বার পড়তে হল পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের তল্লাশির মুখে৷ এমনকী, কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকধারী জওয়ানদের টহল দিতে দেখা গেল৷ শুধু দেখা মিলল না ভোটারদের৷ কয়াল পাড়া এবং ঘোষ পাড়া থেকে কার্যত কেউই এ দিন ভোট দিতে যাননি৷ যে'কটি ভোট পড়েছে তা মণ্ডলপাড়া এবং নস্কর পাড়া থেকে৷ বাড়িতেই পাওয়া গেল মৌসুমি কয়ালকে৷ কোনও রাখঢাক না করেই তিনি বললেন, 'এখানে কেউ ভোট বয়কটের ডাক দেয়নি৷ গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভোট দিতে যায়নি৷ আমাদের একটাই দাবি, ধর্ষকদের শাস্তি চাই৷ সিবিআই তদন্ত চাই৷' ভোট দিতে যাননি টুম্পা কয়ালও৷ তিনি ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে৷ আর অপরাজিতার পরিবার? সকালে নিজের বাড়িতেই পাওয়া গেল অপরাজিতার বাবা-মাকে৷ অপরাজিতার বাবা ক্লান্ত গলায় শুধু বললেন, 'মেয়েটাই নেই৷ তার একটা বিচার চাই৷ আর কিছুতে আমাদের কোনও উত্‍সাহ নেই৷ ভোট দিলে কি বিচার পাব?'

সরাসরি ভোট বয়কটের ডাক না থাকলেও ভোট থেকে নিজেদের দূরে রেখে নীরব প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিল কামদুনি৷ কিন্ত্ত তার মধ্যেও কিছু মানুষ ভোট দিতে গিয়েছেন৷ যেমন, নস্করপাড়ার পুলিন নস্কর৷ তিনি বলছিলেন, 'এতদিন তো এখানে ভোট দিতেই দিত না সিপিএম৷ বুথে যাওয়ার আগেই ভোট হয়ে যেত৷ এ বার তার প্রতিবাদ জানাতেই ভোট দিয়েছি৷ কিন্ত্ত ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ যাঁদের ইচ্ছা হয়েছে, ভোট দিয়েছেন৷'
কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের এজেন্ট বুথে থাকলেও সিপিএমের কোনও এজেন্টের টিকিও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে তৃণমূলের এজেন্টদেরও যে মাছি মারা ছাড়া বিশেষ কোনও কাজ নেই, তা স্পষ্ট৷ সন্টু কয়াল নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, 'এই গ্রামের অনেকে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে৷ অন্যবার ভোটের সময় তাঁরা সবাই গ্রামে ফিরে আসেন ভোট দেওয়ার জন্য৷ কিন্ত্ত এ বছর কেউ যাচ্ছেন না ভোট দিতে৷' ভোটের লাইনে না দাঁড়ালেও কামদুনি গ্রামের জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক৷ দোকানপাটও খোলা ছিল৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই মাচায় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের আড্ডার বিষয়বস্ত্ততেও জায়গা পেল না পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ আলোচনার সূত্র বাঁধা রইল ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতেই৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও কামদুনি দাপিয়েছে বাইক বাহিনী৷ যার নেতৃত্বে থাকত আনসার আলি মোল্লা৷ ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এখন সে জেলে৷ কিন্ত্ত এ বছর অন্তত সেই বাইক বাহিনীর দাপট নেই৷ এক গ্রামবাসীর কথায়, 'আরে দাদা, আনসারই তো জেলে৷ সন্ত্রাস করার লোক কোথায়! গত বারের পঞ্চায়েত ভোটেও দেখেছি, এই আনসারকে দলবল নিয়ে এলাকায় টহল দিতে৷'

ভোট থেকে দূরে প্রতিবাদী কামদুনি৷ এখন গ্রামে সন্ত্রাস নেই৷ তবু যেন খানিকটা সন্ত্রস্তই দেখায় কামদুনির গৌতম কয়ালদের৷ একবার তো 'সিপিএম-মাওবাদী' তকমা জুটেছে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে খুনের বিচার চেয়ে৷ ভোট না-দিয়ে আবার না 'মাওবাদী' তকমা জোটে৷ তবু হাল ছাড়তে নারাজ কামদুনি৷ এ লড়াইয়ের শেষ দেখতে চায় অপরাজিতার পাড়া-পরিবার৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...