হিমাদ্রি সরকার
'ক্যায়সা ভোট হ্যায় ইয়ে! সব আপনা আপনা কাম কর রহা হ্যায়, পর ভোট দেনে কোই নেহি যা রহা হ্যায়! ইতনা সন্নাটা কঁহি নহি দেখা৷'
কামদুনির ভোটারদের এহেন আচরণে রীতিমতো হতবাক মধ্যপ্রদেশে থেকে আসা সিআরপিএফের এক জওয়ান৷ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাঙালি জওয়ানের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে কথাগুলি বলে ফেললেন তিনি৷ পরে কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ওই জওয়ান জানালেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোট তিনি দেখেছেন৷ কিন্ত্ত কামদুনির মতো ভোট তিনি কস্মিনকালেও দেখেননি৷ তবে যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ ভোট দিতে বাধ্যও করেনি৷ বস্ত্তত, কামদুনির মতো ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট তিন জেলার কোথাও হয়নি৷
মাওবাদীদের হুমকি নেই৷ সন্ত্রাসের আবহ নেই৷ ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে কোনও পোস্টারও নেই৷ তবুও কামদুনি মুখ ফিরিয়ে থাকল পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে৷ গোটা কামদুনির একটাই দাবি, আগে অপরাজিতার খুনিদের শাস্তি হোক, তার পর ভোটের কথা ভাবা যাবে৷
কামদুনির ভোটার সংখ্যা ৯৫২৷ একটিই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র৷ কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এ দিন কামদুনিতে দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৮৫টি৷ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২৬৬, মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশও নয়৷ গ্রামবাসীদের মধ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও উত্সাহ না থাকলেও প্রশাসন কিন্ত্ত তত্পর৷ কামদুনি মোড় থেকে গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দু'বার পড়তে হল পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের তল্লাশির মুখে৷ এমনকী, কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকধারী জওয়ানদের টহল দিতে দেখা গেল৷ শুধু দেখা মিলল না ভোটারদের৷ কয়াল পাড়া এবং ঘোষ পাড়া থেকে কার্যত কেউই এ দিন ভোট দিতে যাননি৷ যে'কটি ভোট পড়েছে তা মণ্ডলপাড়া এবং নস্কর পাড়া থেকে৷ বাড়িতেই পাওয়া গেল মৌসুমি কয়ালকে৷ কোনও রাখঢাক না করেই তিনি বললেন, 'এখানে কেউ ভোট বয়কটের ডাক দেয়নি৷ গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভোট দিতে যায়নি৷ আমাদের একটাই দাবি, ধর্ষকদের শাস্তি চাই৷ সিবিআই তদন্ত চাই৷' ভোট দিতে যাননি টুম্পা কয়ালও৷ তিনি ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে৷ আর অপরাজিতার পরিবার? সকালে নিজের বাড়িতেই পাওয়া গেল অপরাজিতার বাবা-মাকে৷ অপরাজিতার বাবা ক্লান্ত গলায় শুধু বললেন, 'মেয়েটাই নেই৷ তার একটা বিচার চাই৷ আর কিছুতে আমাদের কোনও উত্সাহ নেই৷ ভোট দিলে কি বিচার পাব?'
সরাসরি ভোট বয়কটের ডাক না থাকলেও ভোট থেকে নিজেদের দূরে রেখে নীরব প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিল কামদুনি৷ কিন্ত্ত তার মধ্যেও কিছু মানুষ ভোট দিতে গিয়েছেন৷ যেমন, নস্করপাড়ার পুলিন নস্কর৷ তিনি বলছিলেন, 'এতদিন তো এখানে ভোট দিতেই দিত না সিপিএম৷ বুথে যাওয়ার আগেই ভোট হয়ে যেত৷ এ বার তার প্রতিবাদ জানাতেই ভোট দিয়েছি৷ কিন্ত্ত ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ যাঁদের ইচ্ছা হয়েছে, ভোট দিয়েছেন৷'
কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের এজেন্ট বুথে থাকলেও সিপিএমের কোনও এজেন্টের টিকিও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে তৃণমূলের এজেন্টদেরও যে মাছি মারা ছাড়া বিশেষ কোনও কাজ নেই, তা স্পষ্ট৷ সন্টু কয়াল নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, 'এই গ্রামের অনেকে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে৷ অন্যবার ভোটের সময় তাঁরা সবাই গ্রামে ফিরে আসেন ভোট দেওয়ার জন্য৷ কিন্ত্ত এ বছর কেউ যাচ্ছেন না ভোট দিতে৷' ভোটের লাইনে না দাঁড়ালেও কামদুনি গ্রামের জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক৷ দোকানপাটও খোলা ছিল৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই মাচায় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের আড্ডার বিষয়বস্ত্ততেও জায়গা পেল না পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ আলোচনার সূত্র বাঁধা রইল ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতেই৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও কামদুনি দাপিয়েছে বাইক বাহিনী৷ যার নেতৃত্বে থাকত আনসার আলি মোল্লা৷ ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এখন সে জেলে৷ কিন্ত্ত এ বছর অন্তত সেই বাইক বাহিনীর দাপট নেই৷ এক গ্রামবাসীর কথায়, 'আরে দাদা, আনসারই তো জেলে৷ সন্ত্রাস করার লোক কোথায়! গত বারের পঞ্চায়েত ভোটেও দেখেছি, এই আনসারকে দলবল নিয়ে এলাকায় টহল দিতে৷'
ভোট থেকে দূরে প্রতিবাদী কামদুনি৷ এখন গ্রামে সন্ত্রাস নেই৷ তবু যেন খানিকটা সন্ত্রস্তই দেখায় কামদুনির গৌতম কয়ালদের৷ একবার তো 'সিপিএম-মাওবাদী' তকমা জুটেছে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে খুনের বিচার চেয়ে৷ ভোট না-দিয়ে আবার না 'মাওবাদী' তকমা জোটে৷ তবু হাল ছাড়তে নারাজ কামদুনি৷ এ লড়াইয়ের শেষ দেখতে চায় অপরাজিতার পাড়া-পরিবার৷
'ক্যায়সা ভোট হ্যায় ইয়ে! সব আপনা আপনা কাম কর রহা হ্যায়, পর ভোট দেনে কোই নেহি যা রহা হ্যায়! ইতনা সন্নাটা কঁহি নহি দেখা৷'
কামদুনির ভোটারদের এহেন আচরণে রীতিমতো হতবাক মধ্যপ্রদেশে থেকে আসা সিআরপিএফের এক জওয়ান৷ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাঙালি জওয়ানের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে কথাগুলি বলে ফেললেন তিনি৷ পরে কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ওই জওয়ান জানালেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোট তিনি দেখেছেন৷ কিন্ত্ত কামদুনির মতো ভোট তিনি কস্মিনকালেও দেখেননি৷ তবে যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ ভোট দিতে বাধ্যও করেনি৷ বস্ত্তত, কামদুনির মতো ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট তিন জেলার কোথাও হয়নি৷
মাওবাদীদের হুমকি নেই৷ সন্ত্রাসের আবহ নেই৷ ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে কোনও পোস্টারও নেই৷ তবুও কামদুনি মুখ ফিরিয়ে থাকল পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে৷ গোটা কামদুনির একটাই দাবি, আগে অপরাজিতার খুনিদের শাস্তি হোক, তার পর ভোটের কথা ভাবা যাবে৷
কামদুনির ভোটার সংখ্যা ৯৫২৷ একটিই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র৷ কামদুনি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এ দিন কামদুনিতে দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৮৫টি৷ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২৬৬, মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশও নয়৷ গ্রামবাসীদের মধ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও উত্সাহ না থাকলেও প্রশাসন কিন্ত্ত তত্পর৷ কামদুনি মোড় থেকে গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দু'বার পড়তে হল পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের তল্লাশির মুখে৷ এমনকী, কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুকধারী জওয়ানদের টহল দিতে দেখা গেল৷ শুধু দেখা মিলল না ভোটারদের৷ কয়াল পাড়া এবং ঘোষ পাড়া থেকে কার্যত কেউই এ দিন ভোট দিতে যাননি৷ যে'কটি ভোট পড়েছে তা মণ্ডলপাড়া এবং নস্কর পাড়া থেকে৷ বাড়িতেই পাওয়া গেল মৌসুমি কয়ালকে৷ কোনও রাখঢাক না করেই তিনি বললেন, 'এখানে কেউ ভোট বয়কটের ডাক দেয়নি৷ গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভোট দিতে যায়নি৷ আমাদের একটাই দাবি, ধর্ষকদের শাস্তি চাই৷ সিবিআই তদন্ত চাই৷' ভোট দিতে যাননি টুম্পা কয়ালও৷ তিনি ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে৷ আর অপরাজিতার পরিবার? সকালে নিজের বাড়িতেই পাওয়া গেল অপরাজিতার বাবা-মাকে৷ অপরাজিতার বাবা ক্লান্ত গলায় শুধু বললেন, 'মেয়েটাই নেই৷ তার একটা বিচার চাই৷ আর কিছুতে আমাদের কোনও উত্সাহ নেই৷ ভোট দিলে কি বিচার পাব?'
সরাসরি ভোট বয়কটের ডাক না থাকলেও ভোট থেকে নিজেদের দূরে রেখে নীরব প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিল কামদুনি৷ কিন্ত্ত তার মধ্যেও কিছু মানুষ ভোট দিতে গিয়েছেন৷ যেমন, নস্করপাড়ার পুলিন নস্কর৷ তিনি বলছিলেন, 'এতদিন তো এখানে ভোট দিতেই দিত না সিপিএম৷ বুথে যাওয়ার আগেই ভোট হয়ে যেত৷ এ বার তার প্রতিবাদ জানাতেই ভোট দিয়েছি৷ কিন্ত্ত ভোট দিতে কেউ বাধা দেয়নি৷ যাঁদের ইচ্ছা হয়েছে, ভোট দিয়েছেন৷'
কামদুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের এজেন্ট বুথে থাকলেও সিপিএমের কোনও এজেন্টের টিকিও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে তৃণমূলের এজেন্টদেরও যে মাছি মারা ছাড়া বিশেষ কোনও কাজ নেই, তা স্পষ্ট৷ সন্টু কয়াল নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, 'এই গ্রামের অনেকে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে৷ অন্যবার ভোটের সময় তাঁরা সবাই গ্রামে ফিরে আসেন ভোট দেওয়ার জন্য৷ কিন্ত্ত এ বছর কেউ যাচ্ছেন না ভোট দিতে৷' ভোটের লাইনে না দাঁড়ালেও কামদুনি গ্রামের জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক৷ দোকানপাটও খোলা ছিল৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই মাচায় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের আড্ডার বিষয়বস্ত্ততেও জায়গা পেল না পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ আলোচনার সূত্র বাঁধা রইল ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতেই৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও কামদুনি দাপিয়েছে বাইক বাহিনী৷ যার নেতৃত্বে থাকত আনসার আলি মোল্লা৷ ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এখন সে জেলে৷ কিন্ত্ত এ বছর অন্তত সেই বাইক বাহিনীর দাপট নেই৷ এক গ্রামবাসীর কথায়, 'আরে দাদা, আনসারই তো জেলে৷ সন্ত্রাস করার লোক কোথায়! গত বারের পঞ্চায়েত ভোটেও দেখেছি, এই আনসারকে দলবল নিয়ে এলাকায় টহল দিতে৷'
ভোট থেকে দূরে প্রতিবাদী কামদুনি৷ এখন গ্রামে সন্ত্রাস নেই৷ তবু যেন খানিকটা সন্ত্রস্তই দেখায় কামদুনির গৌতম কয়ালদের৷ একবার তো 'সিপিএম-মাওবাদী' তকমা জুটেছে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে খুনের বিচার চেয়ে৷ ভোট না-দিয়ে আবার না 'মাওবাদী' তকমা জোটে৷ তবু হাল ছাড়তে নারাজ কামদুনি৷ এ লড়াইয়ের শেষ দেখতে চায় অপরাজিতার পাড়া-পরিবার৷
No comments:
Post a Comment