কৌশিক সরকার
আমাদের বুথে ভোট লুঠ হয়ে যাচ্ছে দাদা৷
কোন বুথ তোদের?
মথুরাপুর স্কুল৷
অ! সঙ্গে ক'জন আছে?
তিন-চার জন আছি৷
ঝামেলা পাকাস না৷ বাড়ি চলে যা৷
সকাল দশটা৷ সালাউদ্দিন মোল্লা, নুপিল ফকিররা এসেছেন পাশের গ্রামে তাঁদের নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লার বাড়িতে৷ অন্যবারও ভোটের দিনে এ ভাবেই হাওয়া কেমন জানাতে আসেন৷ কিন্ত্ত শুক্রবার তাঁদের যা অভিজ্ঞতা হল, আগে কখনও তা হয়নি৷ এমন ভাবলেশহীন রেজ্জাককে আগে কখনও দেখেননি সালাউদ্দিনরা৷
নিজের জেলায় ভোটের সকালে চন্দনেশ্বরের বাকাড়ি গ্রামে নিজের অফিসঘরেই বসে রেজ্জাক মোল্লা৷ সামনের টেবিলে দু'টো মোবাইল৷ মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে একটা না একটা৷ ওপার থেকে ভেসে আসছে পার্টিকর্মীদের একই রকম কাতর অনুনয়৷ এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না৷ গালিগালাজ করা হচ্ছে৷ চলছে ছাপ্পা ভোট ...৷ আর একই রকম ভাবলেশহীন ভাবে রেজ্জাক বলছেন, 'রোজা রেখেছ? তা হলে বাড়ি ফিরে রেস্ট নাও৷ আর যদি না-ও রেখে থাক, বাড়ি ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে জিরিয়ে নাও!'
কে বলছেন এ-সব কথা? না, আবদুর রেজ্জাক মোল্লা! ভাঙড়, ক্যানিংয়ে ভোট মাত্রই এতদিন এ-সব অভিযোগ উঠত রেজ্জাক-বাহিনীর বিরুদ্ধেই৷
আর আজ!
আপনার মডেলই তো অনুসরণ করছে এরা?
প্রশ্নটা শুনে খানিক থমকে প্রবীণ সিপিএম নেতার জবাব, 'আমি গণতন্ত্রকে কাঠি করেছি, ছুরি মারিনি৷ তাই ফারাক আছে৷ আমি যা করেছি তা গণতন্ত্রের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে৷'
কী করবেন আজ?
নিজের ভোটটা দেব৷ বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাকড়ি দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ৷
বাড়িতে বসে আছেন কেন?
আমি এখানে থাকলে তা-ও পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নেবে৷
যদিও ততক্ষণে সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খাতুনও ছুটে এসেছেন তাঁর কাছে গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে--- বুথের ভিতর তৃণমূলের এজেন্টরা আমাদের বলছে পিটিয়ে সোজা করে দেবে৷ অভিযোগ শুনে দার্শনিকসুলভ নির্লিপ্তি নিয়ে মুখ তুলে এক বার শুধু তাকালেন রেজ্জাক মোল্লা৷ ব্যাস, ওটুকুই!
কোথাও যাবেন না?
যাব ভাঙড়ের দিকে৷ চাকরি বাঁচাতে৷ একটু চক্কর কেটে চলে আসব৷ কী করব আমি? ইটস আ লস্ট গেম ফর সিপিএম৷ আমি চাই সিপিএম হারুক৷ আমি চাই সবকটা জেলা পরিষদই তৃণমূল পাক৷ আমরাও চুরি করেছি, কিন্ত্ত মনে ভয় নিয়ে৷ এরা সব খুল্লামখুল্লা৷ এরা যা পারে করুক৷
বারুইপুরে দলের জেলা অফিসে যাবেন না একবার?
ওখানে সব বড় বড় লেফটেন্যান্ট, কর্নেলরা রয়েছেন৷ আমি ওখানে গিয়ে কী করব?
অন্যবারের থেকে এ বার তাঁর ভোটের দিনের প্রোগ্রাম যে আলাদা, নিজেই জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী৷ যখন সরকার ছিল, তখন সকাল-সকাল নিজের ভোটটা দিতেন৷ তার পর চলে যেতেন চন্দনেশ্বর পার্টি অফিসে 'গণতন্ত্রকে কাঠি করতে'৷ কিন্ত্ত ভোটের দু'দিন আগেই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সাত্তার মোল্লার গ্রেপ্তার তাঁর মনোবলে যে জোর ধাক্কা দিয়েছে, স্বীকার করে নিলেন সেটাও৷ যদিও এ বার সাত্তার থাকলেও যে বিশেষ সুবিধা হত, এমন বলতে পারছেন না৷ কেন? কোথায় গেল আপনার বাহিনী?
'ওরা সরকারি দল করত৷ এখন আমাদের সরকার নেই, ওরাও আমাদের সঙ্গে নেই৷ তবে ওরা এখনও সরকারি দলই করছে!' সাফ জবাব ঠোঁটকাটা রেজ্জাকের৷
আপনি যে গরিব বাড়ির জোয়ান ছেলেদের এক করার কথা বলেছিলেন, তাঁরা?
২০০৯-র লোকসভা ভোটের পর প্রতি বুথে ১০ জন করে এমন ছেলে আমি জোগাড় করেছিলাম৷ তারা কাজ করেছিল বলেই বিধানসভায় জিতেছিলাম৷ কিন্ত্ত আমার দলের নেতারাই মনে করল, ওরা তাদের শত্রু, জায়গা দখল করতে এসেছে৷ তাড়িয়ে দিল৷ ডিসম্যান্টল করে দিল৷ ওরাও এখন বেশিরভাগই তৃণমূলে৷
'চাষার ব্যাটা' একই আছেন৷ রাখঢাক নেই৷ যা মনে আসে, তা-ই হুড়মুড়িয়ে বলে ফেলেন৷ শুধু কিঞ্চিত্ হতাশ৷ অসহায়ও৷
আমাদের বুথে ভোট লুঠ হয়ে যাচ্ছে দাদা৷
কোন বুথ তোদের?
মথুরাপুর স্কুল৷
অ! সঙ্গে ক'জন আছে?
তিন-চার জন আছি৷
ঝামেলা পাকাস না৷ বাড়ি চলে যা৷
সকাল দশটা৷ সালাউদ্দিন মোল্লা, নুপিল ফকিররা এসেছেন পাশের গ্রামে তাঁদের নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লার বাড়িতে৷ অন্যবারও ভোটের দিনে এ ভাবেই হাওয়া কেমন জানাতে আসেন৷ কিন্ত্ত শুক্রবার তাঁদের যা অভিজ্ঞতা হল, আগে কখনও তা হয়নি৷ এমন ভাবলেশহীন রেজ্জাককে আগে কখনও দেখেননি সালাউদ্দিনরা৷
নিজের জেলায় ভোটের সকালে চন্দনেশ্বরের বাকাড়ি গ্রামে নিজের অফিসঘরেই বসে রেজ্জাক মোল্লা৷ সামনের টেবিলে দু'টো মোবাইল৷ মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে একটা না একটা৷ ওপার থেকে ভেসে আসছে পার্টিকর্মীদের একই রকম কাতর অনুনয়৷ এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না৷ গালিগালাজ করা হচ্ছে৷ চলছে ছাপ্পা ভোট ...৷ আর একই রকম ভাবলেশহীন ভাবে রেজ্জাক বলছেন, 'রোজা রেখেছ? তা হলে বাড়ি ফিরে রেস্ট নাও৷ আর যদি না-ও রেখে থাক, বাড়ি ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে জিরিয়ে নাও!'
কে বলছেন এ-সব কথা? না, আবদুর রেজ্জাক মোল্লা! ভাঙড়, ক্যানিংয়ে ভোট মাত্রই এতদিন এ-সব অভিযোগ উঠত রেজ্জাক-বাহিনীর বিরুদ্ধেই৷
আর আজ!
আপনার মডেলই তো অনুসরণ করছে এরা?
প্রশ্নটা শুনে খানিক থমকে প্রবীণ সিপিএম নেতার জবাব, 'আমি গণতন্ত্রকে কাঠি করেছি, ছুরি মারিনি৷ তাই ফারাক আছে৷ আমি যা করেছি তা গণতন্ত্রের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে৷'
কী করবেন আজ?
নিজের ভোটটা দেব৷ বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাকড়ি দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ৷
বাড়িতে বসে আছেন কেন?
আমি এখানে থাকলে তা-ও পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নেবে৷
যদিও ততক্ষণে সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খাতুনও ছুটে এসেছেন তাঁর কাছে গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে--- বুথের ভিতর তৃণমূলের এজেন্টরা আমাদের বলছে পিটিয়ে সোজা করে দেবে৷ অভিযোগ শুনে দার্শনিকসুলভ নির্লিপ্তি নিয়ে মুখ তুলে এক বার শুধু তাকালেন রেজ্জাক মোল্লা৷ ব্যাস, ওটুকুই!
কোথাও যাবেন না?
যাব ভাঙড়ের দিকে৷ চাকরি বাঁচাতে৷ একটু চক্কর কেটে চলে আসব৷ কী করব আমি? ইটস আ লস্ট গেম ফর সিপিএম৷ আমি চাই সিপিএম হারুক৷ আমি চাই সবকটা জেলা পরিষদই তৃণমূল পাক৷ আমরাও চুরি করেছি, কিন্ত্ত মনে ভয় নিয়ে৷ এরা সব খুল্লামখুল্লা৷ এরা যা পারে করুক৷
বারুইপুরে দলের জেলা অফিসে যাবেন না একবার?
ওখানে সব বড় বড় লেফটেন্যান্ট, কর্নেলরা রয়েছেন৷ আমি ওখানে গিয়ে কী করব?
অন্যবারের থেকে এ বার তাঁর ভোটের দিনের প্রোগ্রাম যে আলাদা, নিজেই জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী৷ যখন সরকার ছিল, তখন সকাল-সকাল নিজের ভোটটা দিতেন৷ তার পর চলে যেতেন চন্দনেশ্বর পার্টি অফিসে 'গণতন্ত্রকে কাঠি করতে'৷ কিন্ত্ত ভোটের দু'দিন আগেই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সাত্তার মোল্লার গ্রেপ্তার তাঁর মনোবলে যে জোর ধাক্কা দিয়েছে, স্বীকার করে নিলেন সেটাও৷ যদিও এ বার সাত্তার থাকলেও যে বিশেষ সুবিধা হত, এমন বলতে পারছেন না৷ কেন? কোথায় গেল আপনার বাহিনী?
'ওরা সরকারি দল করত৷ এখন আমাদের সরকার নেই, ওরাও আমাদের সঙ্গে নেই৷ তবে ওরা এখনও সরকারি দলই করছে!' সাফ জবাব ঠোঁটকাটা রেজ্জাকের৷
আপনি যে গরিব বাড়ির জোয়ান ছেলেদের এক করার কথা বলেছিলেন, তাঁরা?
২০০৯-র লোকসভা ভোটের পর প্রতি বুথে ১০ জন করে এমন ছেলে আমি জোগাড় করেছিলাম৷ তারা কাজ করেছিল বলেই বিধানসভায় জিতেছিলাম৷ কিন্ত্ত আমার দলের নেতারাই মনে করল, ওরা তাদের শত্রু, জায়গা দখল করতে এসেছে৷ তাড়িয়ে দিল৷ ডিসম্যান্টল করে দিল৷ ওরাও এখন বেশিরভাগই তৃণমূলে৷
'চাষার ব্যাটা' একই আছেন৷ রাখঢাক নেই৷ যা মনে আসে, তা-ই হুড়মুড়িয়ে বলে ফেলেন৷ শুধু কিঞ্চিত্ হতাশ৷ অসহায়ও৷
No comments:
Post a Comment