Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Monday, July 22, 2013

গনি ‘মিথে’ ফাটল

গনি 'মিথে' ফাটল

গনি 'মিথে' ফাটল
এক হাঁটু কাদায় 'বরকতদা' নিজে দাঁড়িয়ে৷ তাঁর তদারকিতে চলছে গঙ্গার ভাঙন মোকাবিলা৷ এ ছবি রাজনগর, মডেল কলোনি বা তোফির গ্রামবাসীদের স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল৷ মালদহের এই গ্রামগুলির অনেকেই রাজ্য বিদ্যুত্‍‌ পর্ষদ, সেচ বা রেলের কর্মী৷ সবই আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরীর জমানায় পাওয়া চাকরি৷ কিন্ত্ত ২০০৬ -এ 'বরকতদা'র মৃত্যুর পর ভাঙন কবলিত, ভিটেমাটি ছাড়া এই মানুষগুলোর খবর কেউ রাখেন না৷ পুনর্বাসন? হয়নি৷ কর্মসংস্থান? কবেই ঝাঁপ পড়েছে৷ শুরু হয়েছে কাজের খোঁজে ভিনদেশে পাড়ি৷ কারও পা পুরনো দিল্লির রিকশার প্যাডেলে, কেউ পানিপথে লেবার-মিস্ত্রি৷ হালফিলে দিনমজুরি খাটতে কেরল যাওয়ার হিড়িক পড়েছে৷ হবে না-ই বা কেন? বৃদ্ধবয়সেও তাঁদের 'বুড়াবাবা' দুধসাদা মার্সিডিজ চেপে গ্রামে আসতেন, খোঁজখবর নিতেন৷ কোতুয়ালি থেকে এখন আর কেউ আসেন না৷

ভাঙন প্রতিরোধ, পুনর্বাসন, ফুলাহারে জল বাড়লে মানিকচক, হরিশ্চন্দ্রপুর পরিদর্শন, এ সবই অতীত৷ ভূতনির চরের মানুষগুলোর খবরই বা কে রাখে ? অথচ সেই কোতুয়ালি ভবন থেকেই দু'জন সাংসদ, দু'জন বিধায়ক ! গনি খানের এক ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) দক্ষিণ মালদহের সাংসদ, অন্য ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) সুজাপুরের বিধায়ক৷ মৌসম উত্তর মালদহের সাংসদ৷ বাংলাদেশ সীমান্ত ও গঙ্গার পাড় ঘেঁষে যে বৈষ্ণবনগর বিধানসভা, সেখানকার বিধায়ক ডালুর ছেলে ইশা খান চৌধুরী৷ পরিবারতন্ত্র ? সে তো দেখাই যাচ্ছে৷ কিন্ত্ত 'অদৃশ্য' সুতোয় বাঁধা পড়েছে এই লোকসভা বা বিধানসভা কেন্দ্রগুলি৷ এখানকার মানুষ বিধায়ক বা সাংসদদের দেখা সচরাচর পান না৷

বর্তমান প্রজন্মের সান্ত্বনা 'বুড়াবাবা 'র গপ্পো৷ সরকারি চাকরির খোয়াব ভুলে এঁরা অধিকাংশই সামান্য পড়াশোনার পর স্বপ্ন দেখেন দিল্লি-মুম্বইয়ে খাটতে যাওয়ার৷ চাকরির তদ্বিরই বা শুনছেন কে ? ডালুবাবু বেশিরভাগ থাকেন কলকাতার সুইনহো স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে বা দিল্লির তিলক মার্গের সাংসদ আবাসে৷ বেকবাগানে মৌসম ব্যস্ত সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে৷ নাসের বা ইশাকেও সে ভাবে মালদহে দেখা যায় না৷ অভিযোগ সর্বত্র একটাই, 'কোতুয়ালি আর সে কোতুয়ালি নেই৷ এঁরা শুধু গদি চান, মানুষের কাজে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন৷' সাবিত্রী, কৃষ্ণেন্দুরা আগেই দল ছেড়েছিলেন৷ তার পর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যাটা বাড়ছে৷ সর্বশেষ সংযোজন সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী৷ এক কথায়, মালদহের রাজনীতিতে কোতুয়ালির খান চৌধুরী পরিবারের দাপট যে অন্তিম প্রহর গুনছে, তা এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দোরগোড়ায় বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে৷ মালদহের রাজনীতিতে 'গনি-মিথ' ও বুঝি ব্যর্থতার প্রহর গোনা শুরু করেছে৷

কিন্ত্ত কাজ না-করার অভিযোগ মোটেই মানছেন না 'বরকতদা'র উত্তরসূরিরা৷ ডালুর দাবি, 'দাদা শেষ দিকে যা কাজ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ এখন আমরা করছি৷ গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (জিকেআইটি ) বানালাম, জেলায় ৭০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে রাজীব গান্ধী বিদ্যুত্‍‌ যোজনার আওতায়৷ একশো দিনের কাজের পারফরম্যান্সও ভালো৷' কিন্ত্ত জিআইটি'র শিলান্যাসে ঘটা করে প্রধানমন্ত্রী, সনিয়াকে এনেও উপস্থিতি মেরেকেটে আড়াই হাজার? 'পঞ্চায়েতের প্রচার বলে বিরোধীরা যাতে তকমা দিতে না-পারে, সে জন্য ওটাকে জনসভা করিনি৷ পিওর অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম৷'

নারায়ণপুরের মতো শিল্পাঞ্চলে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে খোলা মাঠে সনিয়া-মনমোহনকে নিয়ে 'অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম'? অথচ গত শতকের শেষ দশকে গনির ডাকে আঠারো মাইলে সাউথ মালদা কলেজের সময়ে নরসিমা রাও, সনিয়া গান্ধী, অর্জুন সিংরা এসেছিলেন৷ সে দিন তিলধারণের জায়গা ছিল না৷ আর আজ? ওল্ড মালদার স্কুলশিক্ষক মহম্মদ আরাফত আলির তাত্পর্যপূর্ণ জবাব, 'সাংসদ হওয়ার পর মৌসমকে কোনও দিন এলাকায় আসতেই দেখিনি৷' মজার কথা, কৃষ্ণেন্দুনারায়ণের কালীতলার অফিস বা সাবিত্রীর সদরঘাটের বাড়ি, দু'জায়গাতেই ঘাসফুল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির পাশাপাশি দেওয়াল জুড়ে গনির ছবি৷ কৃষ্ণেন্দুবাবুর অফিসে বসে প্রচারের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রসেনজিত্‍‌ ছাত্র পরিষদের নেতা থেকে এখন টিএমসিপি'র জেলা সভাপতি৷ একদা বিজেপি'র জেলা সম্পাদক গোপাল পোদ্দার আজ কৃষ্ণেন্দুর রাজনৈতিক সচিব৷ হুমায়ুন কবীরকে মন্ত্রী করেও অধীর-দুর্গে তেমন ফাটল ধরাতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্ত্ত এখানে মন্ত্রিত্বের টোপ বেশ সফল৷

তবে এই কৃতিত্বে ডালুদের ভূমিকাও কম নয়৷ সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী বললেন, 'কংগ্রেসে কাজ করা মুশকিল৷ তাই তৃণমূলে এলাম৷ নেতারা সকালে কোতুয়ালি আসেন, বিকেলে হতেই কলকাতা-দিল্লি৷ বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই৷' তা বলে একেবারে ভোটের মুখে দলবদল? তা ছাড়া জেলা সভাধিপতির দায়িত্ব সামলানো নেতা তো অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াবেন৷ তাঁকে আবার কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে কেন? বেরিয়ে এল ঝুলির বেড়াল, 'ওরা গৌতম চক্রবর্তীকে জেলা সভাধিপতি থাকা সত্ত্বেও পরে টিকিট দেয়নি৷ আমার সঙ্গে এমনটা করবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?' শৈলেন সরকার-জীবন মৈত্রর পরে হালের নেতাদের যা অবস্থা, তাতে এ জেলায় দল পাল্টালে সিপিএম-এর কথা অতি বড় অবোধও ভাববেন না৷ বিকল্প তাই তৃণমূলই৷ আর এই একমাত্র বিকল্প হতে গিয়েই নাকি তৃণমূলে ঢুকছে বেনোজল৷ অভিযোগ, সোহরুল, আসাদুল বিশ্বাসের মতো দাগী সমাজবিরোধীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছে৷ তাদের বলে বলীয়ান তৃণমূল ইতিমধ্যেই যদুপুর, মোজমপুর, বামনগ্রামের মতো কংগ্রেস দুর্গে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত, পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে৷ সমাজবিরোধী প্রসঙ্গে কৃষ্ণেন্দুর সাফ জবাব, 'সবাই এখন তৃণমূলে আসছে৷ আমরা আছি বলেই মোজমপুরের মতো জায়গায় শান্তি এসেছে৷'

এসেছে কি? মোজমপুরের বদিরুদ্দিন বললেন, 'এবারও মনে হচ্ছে ভোটটা দিতে পারলাম না ! আসাদুল যখন সিপিএম ছিল, তখনও আমরা ব্যালট চোখে দেখিনি৷ এরাও দেখছি ভোট চায়, মন নয়৷ এটাই হয়তো পরিবর্তন৷' গত পঞ্চায়েতে মালদহে দেখাই মেলেনি তৃণমূলের৷ এবার ৯০ শতাংশ আসনে তাদের প্রার্থী৷ দলে সমাজবিরোধীদের 'অনুপ্রবেশ'? উপেক্ষিত মালদহের সে সব ভাবার সময় কোথায় ? গনি-পরবর্তী মালদা যে এখন বিকল্পের খোঁজে৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...