We have forgotten our promise for Millennium Goal. অপুষ্টির সর্বশেষ স্তর হল অনাহার যা চিরস্থায়ী শারীরিক বিকলাঙ্গতা এবং মৃত্যু কারণ হতে পারে।
We have forgotten our promise for Millennium Goal.
অপুষ্টির সর্বশেষ স্তর হল অনাহার যা চিরস্থায়ী শারীরিক বিকলাঙ্গতা এবং মৃত্যু কারণ হতে পারে।
দারিদ্রতা,দীর্ঘদিন না খেতে পাওয়ার কারনে অনাহারে মৃত্যুর খবর আমলা শোলের ঘটনা থেকে মানুষের সামনে আসতে শুরু করে। জলপাইগুড়ির চা বাগান থেকে উঠে আসে কঙ্কালসার মানুষগুলির খবর। ঘাস পাতা শিকড় বাকড় খেয়ে তাদের অনেকেই বিকলাঙ্গ। অনেকেই অকালে মারা গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারবার একথা জানালেও কোন সরকার অনাহারে মৃত্যু স্বীকার করেনি।
বরং রোগ এবং বয়সের ভারে মৃত্যু বলে চালাতে সচেষ্ট হয়েছেন বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে অনাহারে মৃত্যুর স্বীকৃতি আদায় করতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আদালতের রায় সরকার মেনে নিতে বাদ্ধ হলেও এই ঘটনা থেকে কোন শিক্ষা লাভ করেনি। বরং ধামাচাপা দেবার জন্য বেশী সচেষ্ট হয়েছেন। অবহেলা ও কুটিলতার এই ছিদ্র ধরেই অনাহার ছড়িয়ে পড়েছে। বিকলাঙ্গতা ও মৃত্যু হানা দিচ্ছে প্রত্যেক জেলায়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে আসছে যে,এই মৃত্যু ও বিকলাঙ্গতার শিকার হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
২০১২ সালের ১৩ই আগস্ট মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের আকতাই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অনাহারের খবর আসতে শুরু করে। ছাত্তারা খুদিপুরের ৭৫ বছর বয়স্ক জাওয়া বেসরার অনাহার পীড়িত হওয়ার খবর প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। মালদা সহযোগিতা সমিতির কর্মীরা সমীক্ষা করে জানতে পারেন যে অধিকাংশ আদিবাসী বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের অবস্থা জাওয়া বেসরার মতই। ভিক্ষা বৃত্তি তাদের একমাত্র উপায়।
বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান-পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ১৩টি অনাহার জনিত মৃত্যুর কথা তুলে ধরা হয়। দুঃখের কথা হল,সরকারী তরফ থেকে একটি মৃত্যুকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উত্তর বঙ্গের চা বাগান অঞ্চলে সফর কালে অনাহারে মৃত্যু হলেও খাদ্যমন্ত্রী তা স্বীকার করেন নি। কান থাকতেও শুনতে পান নি। চোখ থাকতেও দেখতে পান নি। আর মুখ থাকলেও বলতে পারেন নি। সরকারী প্রোটকল এমনই গ্যাঁড়াকল। কোন ক্ষেত্রে সহজেই খোলে আবার কোন ক্ষেত্রে শ্বাসরোধক হয়ে ওঠে।
এমন চলতে থাকলেতো আবার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়না। অথচ আমরা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছি যে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও অনাহার থেকে দেশকে রক্ষা করব। সার্বিক ভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করে ভারতবর্ষকে ক্ষুধা শূণ্য দেশে রূপান্তরিত করব। যদিও ভারত গর্ব করে বলতে পারে যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পগুলির আওতায় গর্ভজাত শিশু থেকে একেবারে মৃত্যু পথ যাত্রীকেও ভাগিদারী দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গুলির তালিকাও বৃহৎ এবং ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি মানুষকে এই প্রকল্পগুলির কোন না কোন একটির মধ্যে প্রাপকদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
এখন কথা হল, ২০০০ সালে ১৮টি প্রয়োজনীয় লক্ষ্য মাত্রা ও ৪৮টি নির্দেশ নামা তৈরি করে আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণা পত্র প্রকাশ করে।
বিশ্বের সব দেশ নেতারা সেখানে স্বাক্ষর করেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, আন্তর্জাতিক জাতিগুলি দারিদ্রতা, ক্ষুধা, আসুখ, নিরক্ষরতা , প্রাকৃতিক অনুৎকর্ষতা এবং মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করবে। মূলতঃ এই ১৮টি বিষয়কে ৮টি ল ক্ষ্যের মধ্যে এনে উন্নয়ণ সাধিত হবে।
সহস্রাব্দের উন্নয়ণের ৮ টি লক্ষ্য হল ঃ
১) দারিদ্রতা ও ক্ষুধাকে নির্মূল করা।
২) সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা।
৩) লিঙ্গ সমতা ও মহিলাদের স্বশক্তিকরন।
৪) শিশু মৃত্যু কমানো।
৫) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান।
৬) এইচআইভি/এডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই।
৭) প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। এবং
৮) উন্নয়নের জন্য বিশ্ব-ভাগিদারীত্ব তৈরি করা।
এই প্রতিবেদনে দারিদ্রতা ও ক্ষুধা নির্মূল করার বিষয়ের উপর ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের উপর গুরত্ব দেওয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১০ সালে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিশ্বের ৯২৫ মলিয়ন মানুষ দীর্ঘ কালীন ক্ষুধায় পীড়িত। এই তালিকায় আছে ভারতের ৮ টি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ৮টি রাজ্যে অনাহার পীড়িত মানুষের সংখ্যা আফ্রিকার ২৬টি অতিগরীব দেশের লোক সংখ্যা থেকেও ১১ মিলিয়ন বেশী। পশ্চিমবঙ্গও ভারতের এই ৮টি রাজ্যের অন্যতম। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কৃষির ব্যবস্থা, বনসম্পদ ও জলসম্পদ বিকাশের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে। গ্রামীন ক্ষেত্রে কৃষিতে বেশী বিনিয়োগ করে প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করার কথাও বলা হয়েছে । একথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে প্রত্যেক দেশ যত্নবান হবে।
জনগণের বিপুল চাপে বর্তমান সরকার খাদ্যসুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও তা সম্পূর্ণ জনবিরোধী একটি বিল। বর্তমান অবস্থায় এই বিল পাশ হলে তা মোটেও ভারতীয় নাগরিকদের খাদ্য সুরক্ষিত করবেনা। জাতীয় খাদ্যের অধিকার অভিযানের পক্ষ থেকে এই বিলের জনবিরোধী দিকগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।
যে দিকগুলি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ ঃ
-বর্তমান বিলে দেশের ৩৩% মানুকে খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
-আগের এপিএল, বিপিএল কথাগুলি তুলে দিয়ে প্রাইওরিটি গ্রুপ ও জেনেরেল গ্রুপ করা হয়েছে, যাতে আগের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।
-এই বিলে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে।
-পরিবার পিছু (৫জন করে) ২৫ কেজি খাদ্য দেবার কথা বলা হয়েছে। যা দিনে একজনের ভাগে ১৬৬ গ্রাম করে দাঁড়ায়। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য দেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
-প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ , সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিয়ে এই বিল একেবারেই নিরব(যা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর নির্দেশিকার পরিপন্থী)।
-এই বিলে জাঙ্ক ফুড বা বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি খাবারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা মানুষের খাদ্য সার্বভৌমতা ধ্বংস করে দেবে ।
-এই বিলে সরকার খাদ্যের পরিবর্তে আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদ টাকা (ক্যাশ ট্র্যান্সফার) প্রদানের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে।
-খাদ্যের বদলে নগদ টাকা প্রদানের এই প্রস্তাব শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি ইচ্ছে করেই এই জটিলতা তৈরি করছেন? সুযোগ করে দিচ্ছে্ন কালোবাজারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে! নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই যারা জনজীবনকে দিশাহারা করে তুলেছে? দিন মজুরে পরিণত করে ফেলেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে? রাষ্ট্রীয় শ্রমের সবটুকুই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদক মুনাফাবাজদের লাভের খাতায়।
এই ঘোলা জলে পড়ে মিলেনিয়াম গোলের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঝরা পাতার মত ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে সাইনিং ইন্ডিয়ার গোয়েবলসিয় শ্লোগান। ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পালন তাই এক অলীক কল্পনা মাত্র।
No comments:
Post a Comment