সোনাগাছিতে দুর্গাপুজোর অনুমতি দিলে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হবে৷
এই যুক্তি খাড়া করেই যৌনকর্মীদের পুজোর অনুমতি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্বর্তী নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করল রাজ্য সরকার৷ শুক্রবার রাজ্যের আবেদন গ্রহণও করেছে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ৷ সোমবার সেই আবেদনের শুনানি হতে পারে৷
সোনাগাছির অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট ও মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ১৫০ বর্গফুট জায়গায় দুর্গাপুজো করতে চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি৷ দু'দিন শুনানির পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে পুজো সংক্রান্ত নিয়মাবলি আদালতে জানানোর নির্দেশ দেন৷ আগামী মঙ্গলবার ফের শুনানি হওয়ার কথা ছিল৷ তার আগেই সরকার সিঙ্গল বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করল ডিভিশন বেঞ্চে৷
পুজোর অনুমতি প্রদানে রাজ্যের আপত্তির 'যুক্তি': এলাকাটি ঘিঞ্জি৷ প্রায় এক লাখ মানুষের বাস৷ প্রতি দিন প্রায় তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করেন ওই এলাকা দিয়ে৷ রাস্তা এমনিতেই সরু, পুজোর মণ্ডপ হলে আপত্কালীন পরিস্থিতিতে দমকলের গাড়িও ঢুকতে পারবে না৷ তবে সরকারের তরফে অন্য যে যুক্তিটি পেশ করা হয়েছে, সেটা এক রকম অভাবিত৷ সরকারের দাবি, ওই এলাকায় নানা ধর্মের মানুষের বাস৷ দুর্গাপুজোর অনুমতি দিলে সম্প্রীতি ব্যাহত হতে পারে৷ 'একটি নির্দিষ্ট ধর্মের উত্সবে' তাই অনুমতি দিতে নারাজ রাজ্য৷ ২০০৫ সালে হাইকোর্টের দেওয়া একটি রায়কেও আবেদনে হাতিয়ার করেছে সরকার৷ বলা হয়েছে, সেই রায়ে আদালতই নতুন পুজোর অনুমতি দেওয়া বন্ধ করতে বলেছিল ৷ কোনও কোনও মহলে অবশ্য জল্পনা, এর আগে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের মন্ত্রীরা পুজোর নামে গুন্ডামি করছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিচারপতির ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েই আপিল মামলা করে সরকারের তরফে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে শুনানি সরানো হল৷
ডিভিশন বেঞ্চে সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে যৌনকর্মীদের আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ি বলেন, 'রাজ্য সরকার গায়ের জোর দেখাচ্ছে৷ যদি ওদের যুক্তি মেনে নিই, তা হলে তো কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কোনও এলাকাতেই দুর্গাপুজো হওয়ার কথা নয়৷ কিন্ত্ত সে রকম যে-সব এলাকায় পুজো হয়, কোথাওই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হয় না৷' রাজ্যের আপিলে সম্প্রীতি-সংক্রান্ত বক্তব্য দুর্গাপুজো ঘিরে অনভিপ্রেত বিতর্কের জন্ম দেবে বলেই আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য৷ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজে একটি পুজোর মূল উদ্যোক্তা৷ ফিরহাদ সরকারের 'যুক্তি' নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ তিনি বলেন, 'এটা স্বরাষ্ট্র দন্তরের বিষয়৷ আমি কিছু বলব না৷'
সরকারের যুক্তি শুনে বিস্মিত দুর্বারের মুখ্য উপদেষ্টা স্মরজিত্ জানাও৷ তাঁর কথায়, 'সরকারের বক্তব্য হাস্যকর বললেও কম বলা হয়৷ আমার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যৌনকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ধর্মনিরপেক্ষ৷ সব ধর্মের উত্সবেই আনন্দ করে যৌনপল্লি৷ আজ পর্যন্ত ধর্ম নিয়ে এখানে কোনও অশান্তি হয়নি৷'
No comments:
Post a Comment